বন্ধুরা থাকলে জেতে সবাই

সকালে ফ্যান্টাসি কিংডম পৌঁছানোর পর ঢাবি বন্ধুসভার বন্ধুদের একাংশ
ছবি: বন্ধুসভা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার ২০২৩ সালের কমিটি গঠনের পর প্রথম দায়িত্ব হিসেবে আমাদের কাছে সুযোগ এল ঢাকা জেলার শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কাজ করার। প্রস্তুতি চলছিল এক মাস আগ থেকেই। কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য সার্টিফিকেট লেখায় অংশ নিই।

গত ২৯ জানুয়ারি সাংগঠনিক বৈঠকের পর জানিয়ে দেওয়া হলো টিএসসি থেকে ডাবল ডেকার বাসে আমাদের আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। বাস ছাড়বে ৩০ জানুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টায়। রাতে উত্তেজনায় ঘুম আসছিল না। শুধু ঢাবি থেকেই আমরা ৫৪ বন্ধু একসঙ্গে এক বাসে এত দূর যাব, এটা যেমন আনন্দের ছিল, বড় একটা ইভেন্টের দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা ভেবেও কিছুটা স্নায়ুচাপ অনুভব হচ্ছিল।

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘বন্ধুরা থাকলে জিতবে সবাই’। তাই চাপ জয় করতে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ফজরের আজানের সময় মৈত্রী হল থেকে আমরা কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে রওনা হলাম টিএসসির উদ্দেশে। সেখানে আগ থেকেই উপস্থিত ঢাবি বন্ধুসভার সভাপতি গাজি ইমরান, সাবেক সভাপতি শাফিন উজ্জ জামান, সহসভাপতি মোশারফ খানসহ আরও অনেকেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সবাই টিএসটিতে চলে এল।

শুরু হলো আনন্দযাত্রা। আমরা সবাই বাসের দোতলায় বসলাম। সবাই একসঙ্গে থাকলে হইচই হবে না, তা কীভাবে হয়! অধিকাংশেরই রাতে ঠিকভাবে ঘুম হয়নি। ঘুমের রেশ এখনো শরীরে রয়ে গেছে। সেটি দূর করতে বন্ধু আবির হাসান স্লোগান ধরেন, মুহূর্তেই সবার ঘুম দূর হয়ে যায়। বাসেই সকালের নাশতার ব্যবস্থা ছিল।

গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রায় ৯টা বেজে যায়। শিক্ষার্থীদের অনেকেই ততক্ষণে চলে এসেছে। দ্রুত টি-শার্ট আর হ্যান্ড ব্যাজ সংগ্রহ করে আমরা ভাগ হয়ে পড়ি নিজ নিজ দায়িত্বে। অর্ধেকের বেশি স্বেচ্ছাসেবক সার্টিফিকেট বিতরণের বুথে এবং বাকিরা গেলাম বাইরের রেজিস্ট্রেশন বুথে। একটা জিনিস আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত অনেক মা-বাবা সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন এই সংবর্ধনায়। সন্তানদের জন্য বিনা মূল্যে প্রবেশ হলেও অভিভাবকদের জন্য তা ছিল না। মাসের বাঁধাধরা খরচের খাতা থেকে টাকা কেটে ফ্যান্টাসি কিংডমে নিজের বিনোদনের জন্য ঢোকা তাঁরা অনুচিত মনে করে বাইরের বুথের সামনে বসে রইলেন।

তবে তাঁদের মুখে কোনো হতাশা খেয়াল করিনি। আমাদের কাছে কয়েকজন জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁদের বাচ্চাদের দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা আছে কি না? আমরা যখন জানালাম যে, সুস্বাদু ও পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন তাঁরা। ভেতরে সন্তান আনন্দ করছে, ফ্যান্টাসি কিংডমে ঘুরতে আসার সুযোগ পাচ্ছে, সন্তানের এই আনন্দে তাঁরাও আনন্দিত।

বেলা দেড়টার দিকে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমাদের ডাকা হলো। তারপর একটু বিশ্রাম শেষে আড়াইটার দিকে চলে গেলাম মঞ্চের দায়িত্বে। বিকেল চারটা পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালনের পর ফ্যান্টাসি কিংডম একটু ঘুরে দেখে পৌনে পাঁচটায় আবারও বাসের কাছে চলে এলাম। এবার ঢাকায় ফেরার পালা।

সারা দিন পরিশ্রমের পর ক্লান্তি নিয়ে ফেরার রাস্তায় যখন আবার সবাই ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করেছে, তখন শাফিন উজ্জ জামান প্রস্তাব দিলেন গানের কলি খেলার। মুহূর্তের মধ্যেই সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সভাপতির নেতৃত্বে দুটি দল ভাগ হয়ে গেল। প্রথমে একজন-দুজন করে যুক্ত হওয়া শুরু করল খেলায়। আস্তে আস্তে যখন উত্তেজনা বাড়ল, তখন ঝিমুনি কাটিয়ে উঠে বসল অন্য বন্ধুরাও। এভাবে গানে গানে কখন যে টিএসসি পৌঁছে গেলাম টেরই পেলাম না।

প্রচার সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা