সমুদ্র আর তুমি

ছবি: লেখক

ফুল,

আজ কুয়াকাটার নির্জন তটরেখায় একা দাঁড়িয়ে আছি। সামনে অদ্ভুত শান্ত এক সমুদ্র—নিভৃত, বিস্তৃত আর ঠিক তোমার মতো গভীর। চারপাশে কেবল ঢেউয়ের শব্দ, বাতাসে লবণাক্ত গন্ধ, আর আমার ভেতরে তোমার স্পর্শের অনুপস্থিতি।

তুমি কি মনে রেখেছ সেদিনটার কথা? ভোর ৫টা। আমাদের দুজনের চোখে ঘুম, কিন্তু মন ভরে ছিল অদ্ভুত রোমাঞ্চে। আমরা জুতা হাতে নিয়ে হাঁটছিলাম ভেজা বালুর ওপর দিয়ে। একপাশে ঘুমন্ত সমুদ্র, অন্য পাশে আকাশ জেগে উঠছে আলোর স্পর্শে। একসময় সূর্যরশ্মি ঠিক তোমার চুল ছুঁয়ে পড়েছিল, আর তুমি চোখ বন্ধ করে বলেছিলে, ‘এই আলোটা আজ শুধু আমাদের জন্য, বুঝলে?’

তোমার কণ্ঠে ভোরের স্নিগ্ধতা ছিল, আর আমার ভেতর তখন এক আগুনের ঢেউ। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি; তোমার দিকে তাকিয়ে, তোমার হাতটা নিজের মাঝে নিয়ে বলেছিলাম, ‘তুমি ছাড়া বাকি দুনিয়াটা যেন শুধু পেছনের পটভূমি।’
তুমি হেসেছিলে। সেই হাসি, যেটা সমুদ্রও নীরব হয়ে শুনেছিল সেদিন। সেই সকালের পর, দিন গড়িয়েছিল দুপুরে। আমরা ছাতা হাতে বালুকাবেলায় বসে থেকে ঝিনুক গুনছিলাম। তুমি প্রতিটা ঝিনুকে আমাদের নামের প্রথম অক্ষর কেটে রেখেছিলে। বলেছিলে, ‘এগুলো আমাদের স্মৃতির খুদে সংরক্ষণাগার।’

তারপর বিকেলে সূর্যটা ধীরে ধীরে অস্ত যাওয়ার আগে, তুমি একবার বলেছিলে, ‘জানো, আমি চাই একটা জীবন, যেখানে প্রতিটা দিন হবে এই সমুদ্রের মতো—কখনো উত্তাল, কখনো নীরব, তবু একসঙ্গে।’

আজ এই কুয়াকাটার তটে দাঁড়িয়ে, আমি বুঝি—তুমি আমার সমুদ্র। তুমি বিশাল, ব্যাখ্যাতীত, আমার সমস্ত অস্থিরতার নিরাময়। তুমি ছাড়া এখনো সবকিছু থাকলেও, যেন কিছুই নেই। বাতাস আছে, কিন্তু তা আমার চুলে হাত বুলায় না। সূর্য ওঠে, কিন্তু আর চোখে আগুন জ্বলে না।

এই সমুদ্র আজও একই রকম, কিন্তু আমার পাশে তুমি নেই। তবে ভালোবাসা কি পাশে থাকা ছাড়া থেমে যায়? তুমি আজ নেই, কিন্তু এই সমুদ্রের প্রতিটা ঢেউ এখনো তোমার নামে ধাক্কা মারে আমার বুকের পাড়ে।

তুমি জানো? আজও সেদিনের শেষ আলোটাকে আঁকড়ে বাঁচি। আজও কুয়াকাটার প্রতিটা ঢেউয়ে তোমার নাম খুঁজি। তুমি ছিলে, তুমি আছ, তুমি থাকবে—আমার চিরন্তন সমুদ্রের মতো।

মিরপুর ১০, ঢাকা