দিন যত যাচ্ছে, হাওয়া পাল্টাচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, প্রকৃতিও বুঝি তার রূপের পালাবদলে আর পাল্লা দিয়ে পারছে না। যে সময় শীতল অনুভূত হওয়ার কথা, সে সময় গরমের রেশই কাটে না। পৃথিবীর ঠিক সে যুগটায় এসে আমরা কতটুকু মানুষ হিসেবে পাল্লা দিতে পারছি? আদৌ কি পারছি? এমন প্রশ্ন প্রায়ই মনে উঁকি দেয়। মন বলে, মানুষ কী করছে তা নিজে বোঝে না, কাউকে বুঝতেও দেয় না। একে অন্যকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মানুষ মনের সৌন্দর্য হারাচ্ছে। বিপরীত দিক থেকে মন আবার বলে ওঠে, ‘আরে বোকা! ভালো মানুষেরা আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর। টিকে আছি সমাজে। দিন শেষে আমরা এক চত্বরে।’
তাহলে এত বিদ্বেষ, ক্ষোভ আর লোভ কেন? কিসের এত অহংবোধ?
এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক এ রকম—আসলে মানুষ হিসেবে যখন আমি শুধু নিজের ভাবনাকে প্রাধান্য দেব, নিজে ঠিক অন্যজন ভুল এই তকমা দেব; তখনই শুরু হয় ঘাপলা।
আচ্ছা মন, তাহলে কী করা উচিত?
পৃথিবীটা বিশাল বড়। এতটাই বড় যে তুমি যখন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে সমুদ্রের পাড়ে যাও, সেই সমুদ্রের গুঞ্জনে স্বস্তির বাণী তোমার কান পর্যন্ত এসে মস্তিষ্ককে শীতল করে প্রশান্তির বাণী শোনাবে। সমুদ্রের গভীরতা তোমাকে উপলব্ধি করতে শেখাবে। তুমি যদি সমুদ্রের গভীরতা না বোঝ, তবে পৃথিবীর মানুষের মন কি আর পড়তে পারবে? কিংবা বুঝতে পারবে?
মানুষ যখন একা থাকে, চারপাশ তাকে গ্রাস করে। সেখানে দুটি দিক থাকে। ইতিবাচক ও নেতিবাচক। যতটুকু সম্ভব ইতিবাচক পথে না হাঁটলেই চলে। তাইতো প্রকৃতির কাছে আমাদের অকৃতজ্ঞতার হিসাব চরম সীমায় পৌঁছে গেছে।
মানুষ আমি সৃষ্টির সেরা। এই আমিটা শুধু আমি না, গোটা মানবজাতি। কিন্তু মানুষ থেকে কেবল আমিটাকে বের করে এনে চুষে ফেলে নিজেকে দাবি করি আমি সেরা। আমি জানি, আমি সুন্দর এবং উত্তম। বাকিরা অধম।
আমি কোনো দিনই এই হিসাবটা মেলাতে চাই না, ঠিক কোথা থেকে এসেছি? কে গড়েছে? কোথায় আমার শেষ?
বিবেকবোধ কি এতই সস্তা? খুব সহজে অবিবেচক অমানবিক হয়ে ওঠে।
প্রকৃতি যুদ্ধ করে পাল্লা দিয়ে চক্রাকারে ফিরে আসবে। তত দিনে তোমার উপলব্ধি বোধ তেজ করো। কৃতজ্ঞ হও পৃথিবীর প্রতি। মানবিক হও মানুষের প্রতি। অনুগত হও স্রষ্টার প্রতি। কারণ, প্রকৃতির বিচার ধীরগতিতে। মানুষ তুমি হও মাটির মতো ধৈর্যশীল, আকাশের মতো বিশাল।
প্রশস্ত করো মনটাকে। শুধু দূষিত নালায় আবদ্ধ থেকো না। নয়তো নশ্বর পৃথিবী ভয়াবহতা নিয়ে আসছে তোমার জন্য। সেদিনের অপেক্ষা করো অবিবেচক মানুষ।
সভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা