চারদিকে সমুদ্র। যেদিকে চোখ যায়, সমুদ্রের নয়নাভিরাম নীল জলরাশি। নৃত্যের তালে ঢেউ এসে আঁচড়ে পড়ছে দ্বীপের বুকে। জনমানব কেউ নেই। বিশাল একটুকরা নিঃসঙ্গ সবুজ বিরান ভূমির ওপর বছরের পর বছর ধরে একাই দাঁড়িয়ে আছে একটি সাদা বাড়ি। যেন সবুজ ঘাসের গালিচায় একটা সাদা পাথরখণ্ড বসিয়ে দিয়েছে কেউ। পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ বাড়ি হিসেবে খেতাব পেয়েছে এটি। আইসল্যান্ডের দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন এলিডে দ্বীপের বাড়িটি ইতিমধ্যে নজর কেড়েছে সবার। বাড়িটি কে নির্মাণ করেছে বা কেন নির্মাণ করেছে, তার সঠিক কারণ এখনো কেউ জানে না। এ নিয়ে প্রচলিত আছে নানা জল্পনা–কল্পনা।
এক ধনী লোকের নাকি জম্বি ভীতি ছিল। যদি কখনো ঘুম থেকে উঠে শোনেন যে সিনেমার কাহিনির মতো শহরের মানুষ জম্বি হতে শুরু করে, তখন তিনি কোথায় যাবেন? তাই তিনি পূর্বপরিকল্পনা হিসেবে শতসহস্র মাইল দূরে নির্মাণ করে ফেললেন পৃথিবীর নিঃসঙ্গ এই বাড়ি। একদিকে জম্বি আক্রমণ, অন্যদিকে তিনি দেবেন তার ওই বাড়িতে চম্পট। ব্যস তাকে আর পায় কে! ব্রিটিশ এক দৈনিক পত্রিকায় এমন গল্পই বলা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটির কোনো সত্যতা নেই।
কেউ কেউ বাড়ির মালিকানা হিসেবে উপস্থাপন করছে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বিউর্কের নাম। শখের বশে তিনি নাকি নির্মাণ করিয়েছিলেন বাড়িটি, কিন্তু এটাও শুধু গল্পই রয়ে যায়। বাড়িটিকে ঘিরে সেই সঙ্গে যুক্ত হয় আরও অনেক গল্প। একদল বলছে, ধর্মীয় সাধনার জন্যই এই বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। কে করেছে, তা জানে না কেউ। তবে একসময় পাঁচটি পরিবার থাকার কথাও প্রচলিত আছে। ১৯৩০ সালে সর্বশেষ পরিবারটি বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার পর সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে যায়।
জনমানবহীন নিঃসঙ্গ বাড়িটির ব্যাপারে সত্য ঘটনাও উঠে এসেছে। সমুদ্রে ‘পাফিন’ নামে একপ্রকার দীর্ঘচঞ্চু যুক্ত পাখি শিকার করার উদ্দেশ্যে ‘এলিডে হান্টিং অ্যাসোসিয়েশন’১৯৫০ সালে এমন একটি বাড়ি নির্মাণ করে। শিকারে গেলে সেই বাড়িতে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা থাকেন। সেখানে অবকাশ যাপন করে শিকারে বের হন।
বর্তমানে অনেকেই ঘুরতে যান সেখানে। নিজ চোখে দেখে আসতে চান বছরের পর বছর একা দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ, একাকী বাড়িটিকে। যার কেউ নেই। বাড়িটিও হয়তো রাবীন্দ্রিক সুরে ডেকে বলে, ‘আমার তো কোথাও যাওয়ার নেই, এসো আমার কাছে এসো।’
সাবেক সহসভাপতি, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা