ঈদের ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পর আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। প্রায় আড়াই মাস হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর বাড়ি গাজীপুরে। দুই সপ্তাহ ধরে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হলেই বলে, ‘কবে আসবি?’ আমি বলি, ‘মা ফিল্ড ওয়ার্ক চলছে, শেষ হলে শিগগিরই আসব।’ ছোট আপাও এসে বসে আছে আমি কবে বাড়িতে ফিরব তার জন্য। গতকাল মুঠোফোনে কথা হওয়ার সময় মা আমার সঙ্গে একপ্রকার রাগ করেই বলছে, ‘থাক, তোর আর আসার দরকার নাই।’
বাড়িতে যেতে প্রচণ্ড ইচ্ছা করছে। কিন্তু পড়াশোনার চাপের কারণে যেতে পারছি না। মায়ের কথা শোনার পর মন আরও উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছে। হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম, আগামীকাল সকালেই বাড়ি যাব এবং মাকে না জানিয়েই। হঠাৎ করে বাড়িতে গিয়ে উঠলে মা কেমন অবাক হয়, তা দেখার জন্য মন লাফিয়ে উঠছে। উত্তেজনা কাজ করছে, বাসে বসে আছি আর ভবিষ্যৎ কল্পপরিস্থিতি ভেবে ভেবে রোমাঞ্চিত হচ্ছি।
বাড়ির কাছাকাছি তখন। আর তিন-চার মিনিটের রাস্তা। মায়ের ফোনে কল দিলাম, ফোন দেখি বন্ধ। তারপর ছোট আপার ফোনে কল দিয়েছি।
‘হ্যালো আপা, কেমন আছ?’
‘এই তো ভালো, তুই?’
‘ভালোই। ঘুমাচ্ছ নাকি?’
‘নাহ রে, শুয়ে আছি। ঘুম পাচ্ছে।’
‘আচ্ছা, মা কই? ফোনটা মার কাছে দাও।’
‘এই যে বিছানায় বসে আছে, নে কথা বল।’
‘হ্যালো মা, কেমন আছ?’
‘আলহামদুলিল্লাহ, তুই কেমন আছস?’
‘আমিও ভালো, কী রান্না করছ, মা সকালে? কী খাইছ?’
‘গুঁড়া মাছের তরকারি আর তেলাপিয়া মাছের ভুনা রান্না করছিলাম।’
‘বাহ্! ভালোই। মেয়েকে নিয়ে মজার মজার খাবার খাইতেছ। গুঁড়া মাছের তরকারি তো এখন খেতে ইচ্ছা করছে। জানোই আমার প্রিয় খাবার তা–ও আমাকে বললে।’
‘তুই তো আইতাছস না, চইলা আয়।’
কথা বলতে বলতে বাড়ির রাস্তায় চলে এসেছি। মাকে বললাম, ‘তুমি বললে আমি এক মিনিটে চলে আসব।’
‘হইছে, ঢং করিস না। কবে আসবি?’
‘তুমি বিশ্বাস করলা না, তাই না মা? তোমার ছেলে সব পারে। এক মিনিটে রাজশাহী থেকে গাজীপুর আসা কোনো ব্যাপারই না। দাঁড়াও বিশ্বাস করাচ্ছি।’
ফোনটা কেটে ঘরে ঢুকেই জোরে ডাক দিয়ে বললাম, ‘মা, এই যে আমি চলে আসছি। হা হা হা।’
মা এমনভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, দেখে মনে হচ্ছে তিনি বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের কোনোটা দেখছেন! ছোট আপাও খুশিতে আত্মহারা। এত বিস্মিত খুশি আমার বিগত বাইশ বছরের জীবনে বোধ হয় কোনো দিন উপভোগ করিনি। আহ্! কী পরম শান্তি।
কার্যনির্বাহী সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা