একটি নিখোঁজ প্রেমপত্র

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বয়স তখন সাত বছর। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। প্রেম-ভালোবাসা কী জিনিস বুঝতাম না। তবে এটুকু বুঝতাম যে কোনো মেয়েকে ভালো লাগলে তাকে চিঠি লিখতে হয়।

আমি আর আমার বন্ধু ফোরকান। দুজনেরই একটি মেয়েকে ভালো লাগে। সে আমাদের ক্লাসেই পড়ত। তার নাম অপু। কিন্তু কীভাবে চিঠি লিখব। আর লেখার পর তার হাতে কীভাবে পৌঁছাব। এসব ভাবতে ভাবতে কোনো উপায় না পেয়ে স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরে আসি।

পরদিন ক্লাসে বসে দুজন মিলে চিঠি লিখলাম। ওই চিঠিতে কী লিখেছিলাম মনে নেই। টিফিনের সময়টা বেছে নিলাম চিঠি দেওয়ার জন্য। কারণ, ওই সময় সবাই ক্লাসে বই রেখে মাঠে খেলতে যায়। আমরা দুজন অপুর বইয়ের ভাঁজে চিঠি রেখে দ্রুত সটকে পড়ি। অজানা ভয়ে বাকি ক্লাস শেষ করি।

বাসায় ফিরে রাতে অনেক টেনশন হচ্ছিল। যদি চিঠি পেয়ে স্যারের কাছে অপু সব বলে দেয়! তাহলে তো নির্ঘাত মার খেতে হবে। ভয়ও করছে খুব। পরদিন ভিতু মনে স্কুলে গেলাম। ফোরকানের মধ্যে তেমন কিছু দেখিনি। ও একেবারে স্বাভাবিক ছিল। ক্লাসে ঢুকে আমি তো কুঁকড়ে অস্থির। একটু পরপর অপুর দিকে তাকাই। তাকে স্বাভাবিক লাগছে। একটু সাহসও পাচ্ছি। তাহলে অপুও...!

এভাবে অনেক দিন কেটে গেল। অপুর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। যা–ই হোক, অন্তত একটা বিপদ তো কেটে গেল। অপুকেও আর জিজ্ঞেস করা হয়নি কখনো। চিঠিটি কোনো কারণে ওর চোখেই পড়েনি হয়তো। ওই চিঠির আর কোনো হদিস মেলেনি। একটি নিখোঁজ প্রেমপত্র হয়েই রইল।

বাবার চাকরির সুবাদে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে থেকে সপ্তম শ্রেণিতে অন্য স্কুলে চলে যাই। আর কখনো দেখা হয়নি অপুর সঙ্গে। সে হয়তো জানেই না ওর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছিল। যদি আবার কখনো দেখা হয় বলে দেব অবুঝ প্রেমের গল্পের কথা।

লালবাগ, ঢাকা