আজ মায়ের জন্মদিন

অলংকরণ: আরাফাত করিম

দেখতে দেখতে বছরটা শেষ হয়ে গেল। নতুন বছরের নতুন শুরু, নতুন উদ্যম। জীবনের সব পুরোনো, জমে থাকা ধুলা ঝেড়ে ফেলে সতেজ হয়ে শুরু করার দিন। মায়ের জন্মদিনটা এসে পড়ল। বছরের প্রথম দিনটাই মায়ের জন্মদিন হওয়াতে সব সময়ই মনে থাকে। একটা মজার ব্যাপার, বছরের প্রথম দিনটা অনেক মা কিংবা বাবার জন্মদিন। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা জন্মদিনক্ষণ সেভাবে সংরক্ষণ করতেন না বিধায় সেই সময়ে জন্মানো অধিকাংশ মায়ের জন্মদিন বছরের প্রথমদিনই উদ্‌যাপন হয়। সত্যি বলতে মায়েরা শুধু সংসার নামক বটবৃক্ষটাকে ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ রকম করে বাহুডোরে আগলে রাখতে ৩৬৫ বার নতুনভাবে জন্ম নেন। আমার মা–ও ব্যতিক্রম নয়। মধ্যবিত্ত ঘরের বেড়ে ওঠা আমি দেখেছি, মায়ের চেয়ে বড় অভিনেত্রী পুরো পৃথিবীর নাটক-সিনেমা দুনিয়ায়ও নেই। মায়েরা ভালো হন, খারাপ হন, কখনো শাসক কিংবা কখনো মমতাময়ী। এক চরিত্রে কতগুলো মাল্টিপার্সোনালিটি নিয়ে যে তাঁকে বসবাস করতে হয়, সেটা তিনি আর ঈশ্বর বই আর কেউ জানেন না।

সত্যি বলতে ইউরোপ-আমেরিকার মায়েদের চেয়ে আমাদের এশিয়ার দেশগুলোর মায়েরা অনেকটাই ভিন্ন। আমাদের মায়েরা সন্তানদের তাঁদের শেষ বসন্ত অব্ধি যেভাবে আগলে রাখেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এই চল নেই বললেই চলে। তাই আমাদের সন্তানদের সঙ্গে মায়েদের নাড়ির টান অনেক গভীর।

বাসায় গ্যাস নেই। সকালে ঘণ্টা দুয়েক থাকে আর সারাদিনে একেবারে বিকেলেরও পরে গ্যাস আসে, তাও টিমটিম করে জ্বলে। এক বিভীষিকা বলাই চলে। মা সব সময় রুটি বানিয়ে রাখেন সবার জন্য। কিন্তু আমার নিত্যদিনকার রুটি খেতে ভালো লাগে না। গ্যাসের এই যন্ত্রণায় কিছু করারও নেই। মা দেখি সকাল সকাল পিঠা বানিয়ে রেখেছেন আমার জন্য। অন্যরা সবাই রুটি খাচ্ছে আর আমার জন্য পিঠা। অইটুকু গ্যাসে যতটুকু পারা যায়, মা আমার জন্য বানিয়ে রেখেছেন। শত কষ্ট সত্ত্বেও এই আদর, মমতা, ভালোবাসা মা ভিন্ন অন্য কেউ আর কখনো দিতে পারে না। সেদিন করোনা–পরবর্তী সময়ে যখন প্রথম বিমানে চড়ে দেশের বাইরে এসে পড়ছিলাম, বিমানে ওঠা অব্ধি মাকে ছেড়ে যে দীর্ঘসময় বাইরে যাচ্ছি, তা অনুভব করতে পারছিলাম না। করোনাবিধির জন্য মাকে ভালোমতো জড়িয়ে ধরতে পারিনি। যখন বিমানের ইঞ্জিন চালু হলো, মাকে দেশ হতে বিমান মাটিতে থাকা অবস্থায় শেষবার ফোন দিলাম; সেই অনুভূতি কখনো শব্দে প্রকাশ করতে পারব না। ‘আমি চলে যাচ্ছি, মা’ কথাটা বলতে গলা ধরে যাচ্ছিল। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে কথা বলার শক্তি ছিল না।

শুভ জন্মদিন মা। আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই করতে পারিনি এখনো। জীবনের ভেলায় ভাসছি শুধু স্থির হওয়ার জন্য। এই ভাসমান জীবনে আপনাকে শুধু হাসিখুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় আছি। ভগবান বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করি আপনার নিরোগ, হাসিমাখা মুখটাই যেন আমৃত্যু দেখে যেতে পারি। পৃথিবীর সব মাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

সিওউল, দক্ষিণ কোরিয়া