ভিজি স্মৃতির বৃষ্টিতে

তোমার শহরে বৃষ্টি নামুকছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বাইরে বৃষ্টি, কিশোরীর মন ভার। মায়ের বারণ, ভুলেও ভেজা যাবে না তার। ভিজলে নাকি জ্বর বাধাবে, ঠান্ডারও ঝুঁকি আবার। দূরের ল্যাম্পপোস্টে বসে থাকা কাকটার দিকে তাকিয়ে যে মায়া হচ্ছিল, সেটা এখন নিজের জন্য হচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার, বরণ করে নিল একাকিত্ব। জানালা দিয়ে হাত বাড়াল, বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখল, কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে ফেসবুকে লিখল ‘আজ আমার মন খারাপ’।

এই বৃষ্টিসহ তাকে যদি সিনেমার মতো টাইমমেশিনে করে আরও বছর ত্রিশেক আগে পাঠিয়ে দেওয়া হতো সে দেখত, তার বয়সী একটা মেয়ে উঠানে ছপছপ শব্দে হেঁটে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও কয়েকজন খেলার সঙ্গী। ঘর থেকে মা বকছেন। কে শোনে কার কথা, বর্ষার প্রথম বৃষ্টি, না ভিজে থাকা যায় নাকি আবার! অথবা স্মৃতির রোমন্থন করে দেবে, বড় কচুপাতা মাথায় দিয়ে ছুটে আসা দুরন্ত প্রতিবেশী বালক। বারান্দায় বসে পুতুলের বিয়ে দেওয়া। কলাগাছের ভেলায় করে ঘুরে বেড়ানো। মায়ের হাতের ঝালপিঠা। কাঁথামুড়ি দিয়ে বড়দের কাছ থেকে ভয়ংকর সব গল্প শোনা।

বর্ষাতেই জাগা তরুণের মনে প্রেম। কবিতার ছন্দে লিখে ফেলা চিঠি। কদম হাতে ভিজতে ভিজতে তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। ল্যান্ডলাইনে গোপন প্রেমালাপ। খালি গলায় গেয়ে শোনানো বৃষ্টিদিনের গান। লাজুক হাসিতে কথার পাগলামি। বারান্দায় বসে তরুণীর দীর্ঘ উপন্যাসে হারিয়ে যাওয়া। ডায়েরিতে লেখা নিজের কথা—এগুলোও হারিয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। অন্য কোনো খামে, অন্য কোনো গানে রূপ বদলে অনেক কিছুই টিকে আছে এখনো।

বৃষ্টি নামবে। আধা পাকা চুলের বুড়ো হতে যাওয়া মানুষটিকে একদিন নিয়ে যাবে স্মৃতির জানালায়। স্মৃতিরা এসে বসে থাকবে মনের বারান্দায়। নগরীর বদ্ধ কুঠুরিতে মনে বাজতে থাকবে বৃষ্টির সেতার। নিয়ে যাবে বন্ধুদের সঙ্গে দাপাদাপি, মাঠে বাতাবিলেবু দিয়ে ফুটবলে, পানির নিচে ডুব দিয়ে একে অপরকে ধরতে পারার খেলায়। মাছ ধরার জাল নিয়ে ছুটে যাবে নদীতে কিংবা মনে নাড়া দেবে অভাবি চালের ফুটো দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানির কথা।

সাবেক সহসভাপতি, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা