দুটি কথা
বন্ধুসভাই প্রথম আলোর প্রাণ
লেখাটি বন্ধুসভার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়া লেখকের বক্তব্যের প্রতিলিপি এবং ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ‘তারুণ্য’ ম্যাগাজিনের দশম সংখ্যা থেকে নেওয়া।
প্রথম আলোর ২৫ বছর, বন্ধুসভারও ২৫ বছর। দুটো সংগঠন, দুটো প্রতিষ্ঠান একদম পাশাপাশি, একসঙ্গে ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সর্বত্র কাজ করছে। প্রথম আলো, কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা, প্রথম আলো ট্রাস্ট; আমরা প্রথম আলোর বড় বড় অনুষ্ঠান যেমন গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ অন্য সবকিছুর জন্য অনেক সুনাম, স্বীকৃতি পাই। এসবের পেছনে যদি কারও ভূমিকা থাকে, সেটা প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুদের। আমরা বছরব্যাপী এত এত অনুষ্ঠান করতে পারি; এর প্রধান শক্তি বা প্রাণশক্তি হলো বন্ধুসভা।
২৫ বছর ধরে যাঁরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, আমরা যেখানেই যাই; কেউ না কেউ বন্ধুসভার আছেনই। বিদেশে গেলে, বিভিন্ন দেশে কিংবা শহরে বন্ধুসভার বন্ধু রয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বত্র আমরা বন্ধুসভার পাঠক পাই। এই বন্ধুসভা আমাদের বিশাল শক্তি।
বন্ধুসভা একটা স্বাধীন সংগঠন হিসেবে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। বন্ধুসভা আরও বড় হোক। এটাই আমাদের চাওয়া।
একটি ভালো কাজ বা ঈদের সময় যে সহমর্মিতার ঈদ কর্মসূচি; ২০২৩ সালে বন্ধুসভার বন্ধুরা বিভিন্ন দরিদ্র ও অসহায় পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা (২৪ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৮ টাকা) অর্থসহায়তা দিয়েছেন। এ ছাড়া বৃক্ষরোপণসহ যে ১০টি প্রধান কাজ রয়েছে, সেটা খুবই উৎসাহজনক। বন্ধুরা যেসব কাজ করছেন, সবই অনুপ্রেরণামূলক।
বন্ধুসভার বন্ধুদের প্রধান একটি অংশ শিক্ষার্থী। তাই আমাদের বই পড়ার চর্চা বাড়াতে হবে, বিতর্কে আরও একটু জোর দিতে হবে। এসবে বেশি গুরুত্ব দিলে ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য আরও ভালো হবে। আমাদের বই পড়তেই হবে। বই পড়া, গান শোনা, গান শেখা, কবিতা আবৃত্তি করা, সিনেমা দেখা, বিতর্ক করা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা করা—এসব ভালো কাজ আমাদের প্রতিদিন চর্চার চেষ্টা করা উচিত। এগুলো আগামী দিনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরবর্তী জীবনে অনেক বেশি সাহায্য করবে। নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের বলব, এসব কাজে আরেকটু জোর দিতে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের অনেক কিছু করার আছে।
মনে পড়ে ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময়ের কথা, আইলার কথা, উত্তরবঙ্গে বন্যার সময়, সাভারের রানা প্লাজার ঘটনার সময়; আমরা যা কিছু করতে পেরেছি, সবকিছু সম্ভব হয়েছে একমাত্র বন্ধুসভা আমাদের পাশে ছিল বলে। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে আমাদের বন্ধুরা কতটা মানবিক। দেশ ও সমাজের উন্নয়নে তাঁরা কতটুকু অবদান রাখছেন, মানুষের পাশে থাকছেন। এ জন্যই বলি, যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো। বলতে পারি, হারবে না বাংলাদেশ। আমরা ছোট, বড়, মাঝারি—সব কাজে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই। সামাজিক পর্যায়ে, অফিসে—যে যেখানে আছি, আমরা কিছু একটা ভালো কাজ করতে চাই, যেটা অন্যদের থেকে আমাদের ভিন্ন করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার, প্রতিবেশী, সমাজ ও রাষ্ট্রের যেকোনো ভালো কাজে আমরা যুক্ত থাকব।
বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ, নিজের জীবনে শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা, পড়াশোনাসহ অন্যান্য বিষয়ের চর্চা করায় জোর দিতে হবে। সামনের দিন অনেক সম্ভাবনাময়। আবার অনেক কঠিনও। আবার অনেক প্রতিযোগিতামূলক। আমাদের সময় খুব সহজ ছিল। ভালোমন্দ ফলাফল করে কলেজে চলে গেলে ভর্তি হয়ে যেতে পারতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যেতে পারতাম। এখন যেভাবে ভর্তি হওয়ার জন্য আগেই পরীক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হয়, এটা কঠিন। আগামী সময়ে হয়তো আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে যাবে। তাই বলব, ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরি করুন।
বন্ধুসভা একটা স্বাধীন সংগঠন হিসেবে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। বন্ধুসভা আরও বড় হোক। এটাই আমাদের চাওয়া। আর প্রথম আলো সব সময় পাশে থাকবে। বন্ধুসভা যত শক্তিশালী হবে, প্রথম আলোও তত শক্তিশালী হবে।