বিষণ্নতা বা হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় হতে পারে ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করতে পারার চর্চা করা।
আমরা চাইলেও হুট করেই মাদার তেরেসার মতো মহৎ হতে পারব না। তবে ধীরে ধীরে ছোট ছোট কিছু কাজ করে সেই চেষ্টা করা যেতে পারে। এর মধ্যে কাউকে ক্ষমা করতে পারার মহৎ গুণটির চর্চা করা যেতে পারে। ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করতে পারা—এ দুটি গুণ মানুষকে বড় করে তোলে।
দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আমরা নানা হতাশায় ভুগি, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এ সমস্যা প্রবলভাবে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে পড়াশোনার চাপ নিয়ে বিষণ্নতা, সহপাঠীদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা, পড়াশোনা শেষে চাকরি হচ্ছে না বলে বিষণ্নতায় ভোগা। আবার যাঁদের চাকরি হয়েছে, তাঁদের অনেকেই হতাশায় ভুগছেন, কাজ কিংবা বেতন নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কারও কারও পরিবার, বন্ধুবান্ধব অথবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মনোমালিন্য।
আবার দেখা যায়, আমরা যারা ঢাকা কিংবা বড় শহরগুলোয় বসবাস করি, তাদের মধ্যে পান থেকে চুন খসলেই রাগান্বিত স্বভাব চোখে পড়ে। এর কারণ, শহরে অতিরিক্ত জ্যাম, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তীব্র গরম, ঘনবসতি, বাসভাড়ার অসামঞ্জস্যতাসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এসব থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায়—যাতে আমরা মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক রবার্ট এনরাইটের মতে, বিষণ্নতা বা হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় হতে পারে ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করতে পারার চর্চা করা। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘কাউকে ক্ষমা করলে মানসিক সুবিধা রয়েছে যে তার পক্ষে কিছু প্রমাণ আছে, যেমন রাগ ও উৎকণ্ঠা কমে যাওয়া, হতাশা কেটে যাওয়া। পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যে কিছু ইতিবাচক প্রভাবও দেখা যায়, যেমন রক্তচাপ ঠিক থাকে, ভালো ঘুম হয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।’
রবার্ট এনরাইট বলেন, আপনি যত বেশি ক্ষমা করবেন, তত বেশি এটা আপনার জীবনেও ফিরে আসবে। ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, বিশেষ করে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও কাছের মানুষদের মধ্যে। দেখবেন, আপনি দিন দিন নিজেকে আরও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
এই অভ্যাস যখন গড়ে উঠবে, দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কাছে জীবনের সব কিছু সহজ মনে হবে। যেকোনো কঠিন সময়কে সহজভাবে নিতে পারবেন। কারণ, আপনি জানেন, কীভাবে এ সময়কে পেছনে ফেলতে হবে।