প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের লেখা ‘কখনো আমার মাকে’ বইটি প্রথমা প্রকাশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত হয়। আনিসুল হকের লেখার ভক্ত হয়ে যাই তাঁর ‘মা’ বইটি পড়েই। মুক্তিযুদ্ধকালীন সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা বইটি পড়ে সবার মতো আমারও চোখ ভিজে যায়। লেখকের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ ঘটেছিল দু-একবার। প্রথম দেখা হয় ময়মনসিংহে। সে সময় আমি ময়মনসিংহ বন্ধুসভায় ছিলাম। বর্তমানে আমি নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভায় আছি।
‘কখনো আমার মাকে’ বইটিতে মায়ের অগাধ ভালোবাসা, ত্যাগ, সংগ্রাম ইত্যাদি ফুটে উঠেছে। বইটি পড়লে সবাই নিজের অতি প্রিয় মাকে চোখের সামনেই ফিরে পাবে। যেমন খুঁজে পেয়েছি আমি আমার প্রয়াত মাকে। আর ‘মা’ উপন্যাসের মতো এ বইটিতেও মুক্তিযুদ্ধের কষ্টের স্মৃতিগুলো ফুটে উঠেছে। উপন্যাসের শেষে বিষয়টি জানতে পারা যায়। উপন্যাসের মাবলু চরিত্রকে লেখক যেন নিজের আত্নজীবনী বলছেন মনে হয়। বইটি এক দমে পড়ার মতো বই। নিজের গ্রাম্যজীবনের সঙ্গে এ বইয়ের ঘটনাগুলোর দারুণ মিল। কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা, বৃষ্টিতে ভিজে স্কুলে যাওয়া, বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, রকমারি খেলাধুলা, নলকূপের নিচে গোসল করা, মায়ের কড়া শাসন, আবার অসুস্থ হলে পরম মমতা ইত্যাদির উপস্থাপন বইটিকে অনন্য করেছে।
সন্তানদের মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের নিত্য সংগ্রাম, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা, মুক্তিযোদ্ধা বাবার চাকরি হারানো, কারাগারে যাওয়া, নিজের ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে বড় ভাই বাবলুর সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া, ভাই-বোনের ভালোবাসার মিষ্টি বন্ধন ইত্যাদি উপন্যাসটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
লেখকের বয়ানে বইয়ে লেখক তাঁর ছোট মায়ের মুখে কখনো গান শোনেননি। কেন শুনেননি, তার বিবরণ পাওয়া যায় বইয়ের শেষে। শেষ অংশটুকু বইয়ের বড় আকর্ষণ। এত কষ্ট মায়ের মনে জমাট বাধা ছিল তা কে জানত! পড়া শুরু করার পর পাঠক কিন্তু বই শেষ না করে রাখতে চাইবে না। এটাই লেখকের সার্থকতা। পড়ার সময় পাঠক হারিয়ে যাবেন শৈশব-কৈশরের সেই সোনালি ও দুরন্তপনার দিনগুলোতে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম অত্যাচার বইয়ের বর্ণনাতে পাওয়া যায়, আমাদের হতবাক করে দেয়। বীরাঙ্গনাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর উক্তি, ‘তোদের বাবার নামের জায়গায় লিখে দিস শেখ মুজিবুর রহমান’ পাঠককে আবেগাপ্লুত করবে। বর্তমান সময়ের জন্য বইটি এক অনবদ্য রচনা। লেখকের এ ধরনের আরও সাহসী উপন্যাস আগামীতে পাব বলে আশা রইল।
সবশেষে সব মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা। তাঁদের আত্মবিসর্জনের কোনো তুলনা নেই। দেশের প্রতি, মায়েদের প্রতি আমরা চিরঋণী। ভালো থাকুক সব মা।
কার্যনির্বাহী সদস্য, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা