ডিসেম্বরের শহরে ভালোবাসা কেন পোর্সেলিন

ডিসেম্বরের শহরেছবি: হাসান রাজা

ধীর ধীর পায়ে শীত নামে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই। সেই শীত একটু গভীর হয়ে ডিসেম্বরের দিকে পা দিতেই একটা গান খুব করে বেজে ওঠে, ‘ডিসেম্বরের শহরে, ভালোবাসা যেন পোর্সেলিন’। এই লাইন বারবার শুনতে ভালো লাগে, গাইতে ভালো লাগে, ভালো লাগে ক্যাপশনে লিখে দিতে। যেন গানটাও অজান্তেই প্রতিনিধিত্ব করে বেড়ায় ডিসেম্বরের। তবে অনেকের মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঁকি দেয়, কী এই পোর্সেলিন?

ভালোবাসাকে একেকজন একেকভাবে তুলনা করেন। এ নিয়ে লিখেছেন কতশত গান, কবিতা। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে চিনামাটিকেও (porcelain) কেউ ভালোবাসার সঙ্গে তুলনা করতে পারে! হ্যাঁ, পোর্সেলিন মূলত একধরনের চিনামাটিই, যা কিনা বড় চুল্লি কিংবা ভাঁটিতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়িয়ে তৈরি করা হয়। এ জন্য ব্যবহার করা হয় কাওলিন নামক প্রাকৃতিক খনিজযুক্ত পদার্থের মিশ্রণ। তারপর তা দিয়ে তৈরি করা হয় নান্দনিক সব জিনিস। পোর্সেলিনকে তার ধর্ম আর শ্বেতশুভ্র রঙের জন্য উচ্চ মার্গের মৃৎশিল্প গণ্য করা হয়। গানে এই জিনিসকেই উপমা হিসেবে টানা হয়েছে।

ডিসেম্বর আসে বছর বিদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। কাঁপুনি ঝরানো শীতার্ত বাতাসে বিজ্ঞাপন রটে, ‘হারিয়ে যাওয়া’। নতুন সূচনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিদায় জানাতে থাকে অতীতকে। সময়টাতে যান্ত্রিকতাবাদ নিয়ে আসে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা আবার প্রেমময়তাও। যান্ত্রিকতাবাদের ছোঁয়া পড়ে ভালোবাসাতেও। কেমন জানি প্রেম প্রেম লাগে। অনেকেই গায় হারানো প্রেমের বিচ্ছেদের গান। নিকোটিনের আগুনে না পুড়লেও হৃদয়ের চুল্লিতে পোর্সেলিনের মতো হাজার ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ে শহরের ভালোবাসা হয়ে গেছে কঠিন থেকে কঠিনতর।

ভালোবাসার মানুষ আসে, যায়। চোখের সামনেই দেখা যায় কত ঠিকানা বদলায়। চেনা প্রেম হেঁটে বেড়ায় রাস্তায়। কুয়াশায় ঝাপসা হতে থাকে স্মৃতি। কান্নায় ভিজে আসে চোখ। ডিসেম্বর যেন সবকিছুর নীরব সাক্ষী। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা কি আদৌ পারে ঠিকানা বদলাতে! এক মরীচিকাময় অবলম্বন আঁকড়ে ধরে প্রহর গুনে। অন্যদিকে হৃদয়ে পুড়তে পুড়তে ভালোবাসা আরও খাঁটি হতে থাকে অপেক্ষার কাছে।

‘ডিসেম্বরের শহরে’ গানটি ২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল। লিখেছেন ও গেয়েছেন ওপার বাংলার সৌরভ সাহা। কলকাতার আবহে লেখা হলেও দুই বাংলাতেই বেশ জনপ্রিয়তা পায় গানটি। অনেকেই নিজেকে খুঁজে পায় গানের কথায়, যেন তার প্রতিচ্ছবি হয়ে বলে দিচ্ছে ভেতরকার জমানো সব কথা,
‘ডিসেম্বরের শহরে
চেনা বন্ধু, চেনা নিকোটিন
ডিসেম্বরের শহরে
ভালোবাসা যেন পোর্সেলিন’।

নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ