যেভাবে বুঝবেন, আপনি জীবনে কী চান

জীবনে আমরা কী চাই বা লক্ষ্য কী হওয়া উচিত, তা খুঁজে বের করার এখনই উপযুক্ত সময়। মডেল: মৌসুমী মৌসংগৃহীত

প্রত্যেকটি মানুষ একে অন্যের থেকে আলাদা। আচার-আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়া—সবকিছু। নিজের সঙ্গে আরেকজন মানুষের পছন্দ মিলবে না, এটাই স্বাভাবিক। জীবনের লক্ষ্যও ভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণে কেউ কেউ অনেক সময় জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে পারে না। জীবনে সে কী চায়, তা–ই বুঝতে পারে না।

বিশ্বের বুকে নেমে এল নতুন আরেকটি বছর। জীবনে আমরা কী চাই বা লক্ষ্য কী হওয়া উচিত, তা খুঁজে বের করার এখনই উপযুক্ত সময়। সে অনুযায়ী নতুন বছরকে রাঙিয়ে তুলুন। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন, আপনি জীবনে কী চান? চলুন, একটা তালিকা করে নিই। তাহলে সহজেই বুঝে যাবেন।

খুঁজে বের করুন কোন বিষয়টি আপনাকে খুশি করে

জীবনে কে বেশি মূল্যবান: আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়ের তালিকা করুন এবং গুরুত্ব অনুযায়ী ক্রমবিন্যাস সাজান। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস করেন? করে থাকলে সেটা পরিবারের আগে আসে নাকি পরে? আপনার জন্য কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নিজের শখের কাজগুলো করা; যা আপনাকে সুখী করে? নাকি ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া; যা আপনার পরিবারকে সহায়তা করবে এবং একটি আরামদায়ক জীবন দেবে।

মূল্যায়ন এবং অগ্রাধিকারের ক্রমবিন্যাস সাজানোর মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারবেন কোন কাজে আপনি কতটুকু শ্রম দেবেন। তখন সেই অনুযায়ী জীবনটাতে এগিয়ে নিতে পারবেন।

প্রিয় কাজের তালিকা তৈরি: এখানে কেবল সত্যিটা লিখতে হবে। আপনার হয়তো ভ্রমণ করতে ভালো লাগে, অথবা অবসর সময়ে রান্না করা পছন্দ। প্রিয় লেখকের বই পড়া, মুভি দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে খোশগল্প, খেলাধুলা করাও শখের কাজ; কিংবা অনেক দিন ধরে ইচ্ছে ছিল একটি বই লেখার। সেটাই না-হয় লেখা শুরু করে দিন। কারও কারও কাছে আবার ক্রিকেট, ফুটবল, সমসাময়িক বিষয় অথবা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে।

একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের পছন্দ কিন্তু সব সময় একই রকম থাকে না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়। যেমন ২০ বছর বয়সে শখের জিনিস একটা ছিল, আর এখন ৩০ বছরে এসে সব পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব এসেছে। ফলে অগ্রাধিকারের তালিকাও পাল্টে গেছে। তাই ভবিষ্যতের তালিকা করা যাবে না। বর্তমানে কী কী পছন্দ, সেটাই তালিকায় লিপিবদ্ধ করুন। অবশ্যই আর্থিক দিকও বিবেচনায় রাখতে হবে।

যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে
ছবি : কবির হোসেন

সময়ের স্রোতে না যাওয়া: বর্তমান যুগে অনেকেই সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। ধরুন, বাজারে নতুন ডিজাইনের পোশাক এসেছে। আপনার বন্ধু সেটি কিনে নিয়ে এল। এখন আপনারও ইচ্ছে হলো কিনতে। এটা মোটেই করা যাবে না। এখানে ভাবতে হবে, ওই পোশাকটি আসলে আপনার জন্য আরামদায়ক কি না। কারণ, পোশাক সব সময় আরামদায়ক দেখেই কেনা উচিত। অথবা ধরুন, আপনার বন্ধু নতুন বছরে একটি সম্পর্কে জড়িয়েছে। এখন আপনারও ইচ্ছে হলো সম্পর্কে জড়ানোর এবং কয়েক দিনের মধ্যে তা করেও ফেললেন। এমনটা মোটেও করা যাবে না। পরে দেখা যাবে, কিছুদিন পর বিভিন্ন ইস্যুর কারণে সেই সম্পর্কটা ভেঙে গেল। সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঠিক মানুষের জন্য অপেক্ষা করা উত্তম। যাঁর সঙ্গে আপনার মতের মিল হবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করতে পারবেন।

যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা: মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মন ভালো থাকলে আপনি সুখে থাকবেন এবং মানসিকতাও পরিষ্কার থাকবে। এর জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে মন সুস্থ থাকবে। তখন সহজেই বুঝতে পারবেন জীবনে কী করা উচিত।

ক্যারিয়ারে কী চান, খুঁজে বের করুন

দক্ষতার তালিকা তৈরি: আধুনিক এই যুগে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। সবারই কোনো না কোনো দক্ষতা থাকে। কেউ হয়তো ভালো বক্তা, সুন্দর উপস্থাপনা করতে পারেন। কেউ ভালো ছবি তুলে, কারও সিনেমাটোগ্রাফি ভালো, আবার কারও হয়তো লিখতে পছন্দ। ছবি আঁকা, গ্রাফিকস ডিজাইন, অ্যানিমেশন তৈরিসহ নানা দক্ষতা রয়েছে। অনেকে ভালো পড়াতে পাড়েন, তাঁদের শিক্ষকতা পছন্দ। এখন আমাদের দেখতে হবে কোন কাজটা পাড়ি এবং কোন কাজে আনন্দ খুঁজে পাই। সেই কাজটিকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বাছাই করুন এবং সামনে এগিয়ে যান।

এ ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় আপনাকে সহায়তা করতে পারে। একা, সঙ্গীসহ নাকি বড় গ্রুপে কাজ করা পছন্দ? কখন নিজের সেরাটা দিতে পারেন, কেউ টাস্ক ধরিয়ে দিলে নাকি নিজেই কোনো লিড পেয়ে এগিয়ে যেতে পারেন? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর পেলে আপনার ক্যারিয়ার বাছাই করতে সুবিধা হবে।

ভালো লাগার কাজ: সবচেয়ে সুন্দর ক্যারিয়ার হলো তাঁদের, যাঁরা নিজের ভালো লাগার কাজকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তাই খুঁজে দেখুন আপনি কোন কাজে আনন্দ পান।

চাকরি পরিবর্তন নিয়ে অনেকে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকেন
প্রতীকী ছবি

বাজেট তৈরি করুন: ক্যারিয়ার বাছাই করার ক্ষেত্রে আর্থিক দিকটাও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ। যদি আর্থিক সমস্যা না থাকে, তাহলে নিজের ভালো লাগার কাজটিকেই ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। আর আর্থিক অসুবিধা থাকলে, পছন্দের কাজ শুরু করার আগে একটা বাজেট করে নিন এবং সে অনুযায়ী এগিয়ে যান। সফলতা আসবেই।

ক্যারিয়ার পরিবর্তনে সিদ্ধান্তহীনতায় না থাকা: অনেকে নিজের বর্তমান চাকরি বা কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট না। চাকরি পরিবর্তন করব, নাকি করব না! এ নিয়ে চিন্তা কাজ করে। এই সিদ্ধান্তহীনতা থাকা যাবে না। নিজের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তাহলেই ক্যারিয়ার নিয়ে ভয় আর থাকবে না।

সম্পর্কে আপনি কী কী চান

নিজের চাহিদার তালিকা তৈরি: একটি মানুষের সঙ্গে সারা জীবন একসঙ্গে থাকা সহজ কথা নয়। তাই এমন একজন সঙ্গী খুঁজতে হবে, যে আপনার সঙ্গে তাঁর জীবন শেয়ার করে নিতে পারবে। আপনার সিদ্ধান্ত ও বিশ্বাসকে সম্মান করবে। যেমন আপনি যৌথ পরিবার চান নাকি একক পরিবার? সন্তান চান? চাইলে সন্তান কীভাবে লালন–পালন করা হবে? ধর্মীয় বিশ্বাস কেমন? বিবাহ ও বিচ্ছেদ নিয়ে ধারণা কী? কীভাবে সমস্যা সমাধান করবেন?

যে বিষয়গুলো সঙ্গীর মধ্যে থাকতে হবে: পৃথিবীতে কোনো মানুষই পারফেক্ট না। তবু কিছু বৈশিষ্ট্য সঙ্গীর মধ্যে আমরা চাই। যেমন সেন্স অব হিউমার, স্মার্টনেস, মিউজিকসহ বিভিন্ন শখ কী কী, ঘর ও বাইরের কাজগুলো এনজয় করেন কি না, আর্থিক অবস্থা কেমন ইত্যাদি।

নিজেই নিজেকে ভালো রাখতে শেখা: আপনার সঙ্গী যত ভালো মানুষই হোক না কেন, দিন শেষে সে আপনাকে পুরোপুরি সুখে রাখতে পারবে না। এটা তখনই সম্ভব, যখন আপনি নিজেই নিজেকে ভালো রাখতে পারবেন।

সবশেষে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে, জীবনে একমাত্র ভালো থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনি যেভাবে ভালো থাকবেন, সেভাবেই নিজের জীবন ও ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিন।