আমাদের মাথার ওপর
ছায়া হয়ে ছিল যে মেঘ, উড়ে গেছে কোন দূরে।
আমাদের পায়ের নিচে ভিটা হয়ে ছিল যে মাটি,
ধসে গেছে নদী ভাঙনের মতো।
বুক ভরে নিতে চাই প্রশ্বাস, অথচ বাতাসে
ফুলের সুবাস নেই, শুধু কপাল পোড়ার ঘ্রাণ।
আমাদের দু-চোখ এখন আর কোনো স্বপ্ন দেখে না, ডিমের ছড়ানো
কুসুমের মতো হলুদাভ হয়ে গেছে।
আমরা ভুলে গেছি সাবলীল হাসির ভাষা। তাই হাসতে গেলে
বেরিয়ে আসে ডাইনির দাঁত, প্রেতায়ীত শব্দের প্রতিধ্বনি।
যখন কোনো গান গাই, মনে হয় যেন নেড়ি কুত্তার ভাঙা পায়ে
পুনরায় আঘাত দিয়েছে কেউ, বাজখাঁই কাঁদছে প্রাণান্ত ক্রন্দন।
তোমার কলম যেদিন থামিয়ে দিলে, সেদিন থেকে
আমাদের ঠোঁট সিক্ত হয় না কবিতার পঙ্ক্তি চুম্বনে।
যেদিন ছুঁড়ে ফেলে দিলে তোমার বাঁশি, সেদিন থেকে
বিষিয়ে উঠেছে কান, শুনতে পাই না কোনো মধুর রাগিনী।
তোমার প্রতিবাদী মুষ্টিবদ্ধ হাত, অভিযোগের আকাশমুখী তর্জনী,
যখন নামিয়ে নিলে, তখন থেকে আমাদের হাতে শান্তির সাদা পায়রা
উড়িয়ে দিতেই পাথরের মতো নিস্তেজ হয়ে যায়।
তোমার অবর্তমানে এতই ভীতু আমরা, জাগতিক দাজ্জালের মুখের ওপর
ছিটাতে পারি না থুতু, পায়ের আঘাত।
অজস্র অমানুষের মেলায় হাঁটতে গিয়ে যেন
ভুল পথে বাড়িয়েছি পা।
আমাদের নিয়ে যাও সঠিক গন্তব্যে, পিতা যেমন তার
উদ্ভ্রান্ত সন্তানেরে হাত ধরে স্কুলে পৌঁছায়।
তুমি ছাড়া কে আর শোনাতে পারে মক্তবি-মৌলভির মতো
সাম্যের উপদেশ, শান্তির বাণী।
ওগো কবি, ওগো কাণ্ডারি, ওগো দেশের নেতা... জলে ডুবে যেতে যেতে
অসহায় চাইছি ত্রাণ, খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো
তোমার পায়ের কড়ে-আঙুলটিতে একটু ধরতে দাও।
পথ চলতে চলতে হঠাৎ নিভে গেছে বাতি, ভীষণ এ অন্ধকারে
পুনরায় জ্বালাও তোমার বজ্র আলোর ঝলক।