তরুণদের আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণের আবেদনপ্রক্রিয়া

ছবি: এআই

বর্তমান যুগে তরুণদের জন‍্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার দারুণ কিছু সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ শুধু নেতৃত্বের দক্ষতা গড়ে তোলে না, পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, নিজেদের ভাবনা তুলে ধরা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ এ ধরনের সম্মেলনে অংশ নিতে চান, কিন্তু অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা অনেক সময় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এই সমস‍্যা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ফুল ফান্ডেড অথবা আংশিক স্কলারশিপ। যদিও বর্তমানে এসব বৃত্তির সংখ্যা ও পরিমাণ কমে গিয়েছে, তবু এখনো বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন প্রতিবছর বেশ কিছু ফুল ফান্ডেড অথবা আংশিক স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের তরুণেরাও সহজেই এসব সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন।

ওয়েবসাইট
সবার আগে জানতে হবে কোথায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিস্তারিত পাওয়া যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সম্মেলন এবং স্কলারশিপের বিস্তারিত তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে। এর মধ্যে অপরচুনিটি ডেস্ক, ইয়ুথ অপরচুনিটিস, স্কলারশিপ কর্নার, ইউএস ইয়ুথ এনভয় অন্যতম। এই ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করলে আপনি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, ফেলোশিপ ও স্কলারশিপ সম্পর্কে আপডেট পেতে পারেন।

আবেদন
যে সম্মেলনে যেতে চান, তার স্কলারশিপ বা ফান্ডিংয়ের জন‍্য প্রস্তুত হয়ে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই নিজের একটা শক্ত প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। কে কতটা আকর্ষণীয় ও ভালো প্রোফাইল তৈরি করল, তার ওপর নির্ভর করে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা।

প্রচণ্ড প্রতিযোগিতামূলক বাছাইপ্রক্রিয়ায় সফল হতে হলে জীবনবৃত্তান্তে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো থাকতেই হবে:
নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা: সামাজিক সংগঠন, স্কুল, কলেজ বা কোনো কমিউনিটি প্রজেক্টে কোথায় কীভাবে আপনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
উদ্দেশ্যর পরিষ্কার ব্যাখ্যা: কেন আপনি সম্মেলনে অংশ নিতে চান এবং কীভাবে এটি আপনার কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই অংশগ্রহণ থেকে আপনার সংগঠন বা দেশ কীভাবে উপকৃত হবে, এটা দেখানো প্রয়োজনীয়।
সামাজিক কাজ ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম: আপনি আপনার সামাজিক কাজ দিয়ে কীভাবে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন। এখানে বিস্তারিত এবং সম্ভব হলে পরিমাপযোগ‍্য উপায়ে আপনার কাজ তুলে ধরতে হবে।
যোগাযোগ দক্ষতা: বিশেষ করে মোটিভেশন লেটার বা স্টেটমেন্ট লেখার ক্ষেত্রে আপনার যোগাযোগ দক্ষতার প্রমাণ রাখতে হবে।

এই স্কলারশিপগুলোয় সাধারণত অনেক আবেদন পড়ে। এসব আবেদন অনেকগুলো ধাপে মূল‍্যায়িত হয়। এ কারণে প্রতিটি আবেদনপত্রের জন্য আলাদাভাবে সিভি ও মোটিভেশন লেটার তৈরি করা উচিত। এখানে কিছু জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ও স্কলারশিপ লিংক দেওয়া হলো।

One Young World Summit
কভারেজ: ফ্লাইট, থাকা-খাওয়া, কনফারেন্স ফি
লিংক: https://www.oneyoungworld.com/scholarships
যোগ্যতা: ১৮–৩০ বছর বয়সী সক্রিয় তরুণ নেতা

YOUNGA Forum by BridgingTheGap Ventures

কভারেজ: ভার্চ্যুয়াল অংশগ্রহণ বিনা মূল্যে; কিছু শিক্ষার্থীর জন্য ইন-পারসন ফান্ডিং
লিংক: https://youngaforum.com/

Hurford Youth Fellowship (USA)
কভারেজ: মাসিক ভাতা, ভ্রমণ খরচ, স্বাস্থ্যবিমা
লিংক: https://www.ned.org/fellowships/hurford-youth-fellows-program/

UNITE 2030 Youth Delegate Program
লিংক: https://www.unite2030.com/
ফোকাস: এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা)

Global Peace Summit
কভারেজ: সম্পূর্ণ বা আংশিক ফান্ডেড (ভ্রমণ, হোটেল, খাবারসহ)
লিংক: https://globalpeacechain.org/
যোগ্যতা: ১৬–৪০ বছর বয়সী, যাঁরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী

সফল হওয়ার জন্য কিছু অতিরিক্ত টিপস
সময় থাকতে আবেদন করুন: অনেকে স্কলারশিপের ডেডলাইনের দিনে বা এক সপ্তাহের আছে আবেদন করেন। এটি না করে সম্মেলনের ডেডলাইনের তিন থেকে ছয় মাস আগে আবেদন করুন।
ডকুমেন্ট তৈরি রাখুন: সিভি, মোটিভেশন লেটার, রেফারেন্স লেটার, পাসপোর্ট স্ক্যান করে সব ডকুমেন্ট আগে থেকেই তৈরি করে রাখুন।
ইন্টারভিউ অনুশীলন করুন: কিছু সম্মেলনে অনলাইন ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। তাই আগে থেকে অনুশীলন করে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।
লিংকডইন ব্যবহার করুন: অনেক স্কলারশিপ ও সুযোগ লিংকডইনে প্রকাশ করা হয়। এই মাধ‍্যমে যেহেতু একেবারে ওয়ান টু ওয়ান যোগাযোগ করা যায়, তাই এখানে যোগাযোগ করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ শুধু অভিজাত বা ধনীদের জন‍্য নয়। যদি আপনি বাংলাদেশের একজন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ নেতা বা অ্যাকটিভিস্ট হন, তাহলে এসব স্কলারশিপ আপনার জন্যও উন্মুক্ত। একটু চেষ্টা ও প্রস্তুতিই পারে আপনার জীবন বদলে দিতে এবং আপনি ফিরে এসে সমাজেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং সহসভাপতি, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।