আমার বাবা, আমার অনুপ্রেরণা

আমার বাবা, আমার অনুপ্রেরণাছবি: সংগৃহীত

মনে পড়ে স্কুলজীবনের প্রথম দিনটির কথা। সেদিন রিকশা থেকে নামার সময় রাস্তায় পড়ে গিয়ে হাঁটুতে অনেক ব্যথা পেয়েছিলাম। আমার সে কী কান্না! সেই কান্না দেখে বাবা ব্যাকুল হয়ে পড়েন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।

বাবার কাছে কখনো কিছু আবদার করতে হয়নি। তার আগেই তিনি আমার সামনে সবকিছু হাজির করতেন। জানি না, কীভাবে যেন মনের কথা বুঝে ফেলতেন।

ঢাকার এক কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হই। একদিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। এক মাসের বেশি সময় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি ছিলাম। পারিবারিক কারণে মায়ের তখন আমার কাছে থাকার সুযোগ ছিল না। সেই দীর্ঘ সময় বাবা সেবাশুশ্রূষা করেন। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারতাম না। তিনি প্রতিবেলা খাইয়ে দিতেন। কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যান।

এইচএসসির পর ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। তখন বাবা ছিলেন আমার একমাত্র অনুপ্রেরণাদানকারী ব্যক্তি। যত জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি, প্রায় সব জায়গায় তিনি সঙ্গে গেছেন। বাবা পাশে ছিলেন বলেই আজ এত দূর আসতে পেরেছি।

ভর্তিযুদ্ধের দুটি ঘটনা শেয়ার করি।

এক. যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দিন কেন্দ্রে আগেভাগে পৌঁছে যাই। হাতে অনেক সময় থাকায় ভাবলাম, শেষ মুহূর্তে বইটা একটু নাড়াচাড়া করি। কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পড়েছিল। একটি ভবনের সামনে বসে বই খুলে পড়ছিলাম। কিন্তু সূর্যের তাপ এতটাই প্রকট ছিল যে পড়তে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। বাবা সেটি বুঝতে পেরে আমার সামনে এসে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে গেলেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় তিনি রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ছায়া দিয়েছেন।

দুই. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ–ইউনিটের পরীক্ষার পরের দিন ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। পরীক্ষার দিন সকাল থেকে বৃষ্টি। পরীক্ষা শেষ হতে বিকেল হয়ে যায় এবং তারপর অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়। রাস্তায় কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। সঙ্গে ছাতা ছিল একটি। বাবা সেই ছাতা আমাকে দিয়ে নিজে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হোটেল পর্যন্ত পুরো রাস্তা বৃষ্টিতে ভিজে আসেন।

আমার বাবা আমার হিরো, অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তিনি আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ, সৎ ও নিষ্ঠাবান। আমি গর্বিত তাঁর সন্তান হতে পেরে।

শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়