বৃক্ষ
‘লাইলী-মজনু’ গাছের কথা
লেখাটি ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ‘তারুণ্য’ ম্যাগাজিনের দশম সংখ্যা থেকে নেওয়া।
ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেনসহ দেশের অল্প কিছু স্থানে লাইলী-মজনুগাছ দেখতে পাওয়া যায়।
লাইলী-মজনু নামে একটি গাছ রয়েছে, এটি অনেকেরই অজানা। দুর্লভ হলেও এ নামের একটি গাছ দেখতে পাওয়া যায় আমাদেরই বাংলাদেশে। লাইলী-মজনু মূলত চীন ও ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় গাছ। তবে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মাদাগাস্কার, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াতেও এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। লাইলী–মজনুগাছ এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
লাইলী-মজনু ইউফরবিয়েসি গোত্রের একটি উদ্ভিদ। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম এক্সকোকেরিয়া কোচিনচাইনেন্সিস। লাইলী-মজনুগাছ বাড়ির অভ্যন্তরে সহজেই বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পর পর রোদে দিলেই চলে। দুই বছর পর টব পাল্টে দিলে ভালো হয়। লাইলী-মজনুগাছের অনেক ইংরেজি নামের একটি হচ্ছে ব্লাইন্ডনেস ট্রি। শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ এক্সকোকেরিয়া থেকে। গাছটির কষ বা ল্যাটেক্স চোখে লাগলে মানুষের অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এমন নামকরণ।
লাইলী-মজনুগাছের পাতার সৌন্দর্যের কাছে এর ফুলের সৌন্দর্য হার মেনে যায়। এ গাছের পাতার ওপরের পাশ সবুজ ও নিচের পাশ রক্তলাল। প্রকৃতিতে এমন একই পাতার দুই রঙের গাছ সচরাচর দেখা যায় না। আরব্য লোককাহিনি ‘লাইলী-মজনু’র নামানুসারে এই গাছের নামকরণ করা হয়েছে। বন্ধন বা প্রেমের প্রতীক হিসেবে লাইলী-মজনুর কথা বলা হয়। এই গাছের একই পাতায় দুই রঙের সংমিশ্রণ গভীর এক সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে। দুই রঙের এই বন্ধনের কারণে এই গাছের নাম রাখা হয়েছে ‘লাইলী-মজনু’। গাছটি বিরল প্রজাতির। এ প্রজাতির গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
লাইলী-মজনুগাছটি আমাদের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গুল্ম হলেও একে নিয়ে খুব বেশি গবেষণার তথ্য পাওয়া যায় না। ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে, বাগান বা বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি এই গাছের কিছু ঔষধি গুণাবলিও রয়েছে। এর বিষাক্ত কষ সফলভাবে চুলকানি ও একজিমায় বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিপ্যারাসাইট হিসেবে এবং রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে একে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেনসহ দেশের অল্প কিছু স্থানে লাইলী-মজনুগাছ দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে বড় নার্সারিগুলোতে এই গাছ বিক্রি হয়। কাটিং, কলম, এয়ার লেয়ারিং ও বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যবর্ধক এই গাছটি রোপণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে একে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব