আমার জীবনের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সেলিনা ম্যাম। একদিন পড়ানোর ফাঁকে বললেন, ‘শ্রাবণী, কবর কেমন একটা জায়গা দেখো, সেখানে কোনো কল, মেসেজ কিছুই করা যায় না। লোক মারফত খোঁজখবর নেওয়ারও ব্যবস্থা নেই।’ তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। সদ্যই জীবনসঙ্গী হারানো একজন একাকী মানুষের এ ধরনের কথা শোনার পর কী বলতে হয়, আমার জানা ছিল না। ম্যাম কোন শূন্যতাবোধ থেকে কথাটা বলেছিলেন, আজ বুঝতে পারি।
সেই বছরের ৯ জুলাই মধ্য দুপুরে খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে তাঁর রুমের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলাম; দেখি তিনি কাঁদছেন। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। অথচ আমাকে দেখে বললেন, ‘শ্রাবণী, এটা কী হলো?’ তিনি এত মানুষের মধ্যেও কী করে আমাকে দেখতে পেলেন! ব্যাপারটা আমাকে সেদিন অবাক করেছিল। কিন্তু আজ আর অবাক হই না। সম্ভবত সেদিন তিনি এর আগে আর কোনো কথা বলেননি কারও সঙ্গে। তাই পাশে বসা মহিলা জানতে চাইলেন, ‘এখানে শ্রাবণী কে?’ ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘আমি।’ এরপর তিনি আমাকে পাশে বসতে ইঙ্গিত দিলেন। তারপর কী হয়েছিল মনে নেই। সম্ভবত ছোট মানুষদের ওখানে থাকার অনুমতি ছিল না। এ রকম আরও অনেক ছোট-বড় ঘটনা রয়েছে।
এত বছর পর এখন বুঝি, ম্যাম আমাকে তাঁর হৃদয়ে কোন জায়গাটা দিয়েছিলেন। আমার আফসোস তিনি আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছেন, সেটা সেই বয়সে বোঝার মতো ক্ষমতা ছিল না। বর্তমানে তাঁর ফোন নাম্বারটাও আমার কাছে নেই। এই জীবনে আবার কবে দেখা হবে, জানি না। কিন্তু আপনি সব সময় আমার মনে থাকবেন, ম্যাম।
আহা বয়স! পরিপক্বতা! কেন তুমি অসময়েও সময়মতো এলে না!
শিক্ষার্থী, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত