ভাঙা আলো আর পাখির বাসা

কৃষ্ণচূড়াছবি: প্রথম আলো

মহাখালীর পুরোনো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে ছোট্ট চায়ের দোকান। আসাদ মিয়ার হাতের চায়ের গন্ধে ভরে থাকে বিকেলবেলা। আমি একা বসে আছি—মনটা আজ অদ্ভুত রকমের ভারী। মনে হচ্ছে, ভেতরের আলোটা নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

হঠাৎ চোখ পড়ল কৃষ্ণচূড়ার ডালে। এক ডাহুক পাখি উড়ে এসে বসেছে। ওর ঠোঁট থেকে লাল পাপড়ি ঝরে আমার কাপে পড়ল। আমি তাকিয়ে থাকলাম। দেখি, একটা পাখি চুপচাপ বসে আছে বাসায়, ক্লান্ত, নিঃসঙ্গ। আরেকটা পাখি বারবার এসে ওকে ঠোকর মারছে। প্রথমটা কিছুই বলছে না, শুধু সহ্য করছে।

আমার ভেতরে যেন আগুন জ্বলে উঠল—এ শহরের মানুষও তো এ রকম! প্রতিদিন কত আঘাত, কত দহন, তবু আমরা চুপচাপ সয়ে যাই।

কিছুক্ষণ পর অবাক হয়ে দেখলাম, যে পাখি আঘাত করছিল, সেও আবার মুখে খাবার নিয়ে এসে সেই দুর্বল পাখিটাকেই খাওয়াচ্ছে। নিঃশব্দে বুক ভরে গেল এক অদ্ভুত মায়ায়।

ফিরে এসে ভাবলাম, জীবন তো এমনই। অভিমান আছে, দুঃখ আছে, ভালোবাসাও আছে। বয়স বাড়লে হয়তো একদিন আমাদেরও ভাঙা ঘর, পুরোনো কোলবালিশ, নিভে যাওয়া বাতি—সব সঙ্গী হবে। হয়তো তখন কেউ তেল দিতে আসবে না বাতিতে। তবু নদীর ঘাঁটে পৌঁছাবে মাঝিহীন নৌকা। মানুষ যতই ভেঙে যাক, স্বপ্ন তাকে টেনে নিয়ে যায় সঠিক ঠিকানায়।

শিক্ষার্থী, মেডিসিন অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়