‘আমরা নারী, আমরা পারি’ এই স্লোগান একজন নারীকে মনের দিক থেকে একটু প্রশান্তি দিলেও বাস্তব রূপ খুবই ভিন্ন। একজন নারী চাইলেই সবকিছু করতে পারেন না। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একটা ছোট্ট মেয়ে থেকে একজন নারী হয়ে উঠার পথ মসৃণ নয়। জীবনের নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামলে উঠতে হয়। নারীদের আছে বহু শতাব্দীর বহুরূপ। নারী কন্যা, জননী, জায়া, ভগিনী, সহচরী, কামিনী। নারীদের প্রতিনিয়ত থাকে বিরহ, ব্যথা ও যন্ত্রণা, যা তাঁকে মোকাবিলা করে যেতে হয় বাঁচার তাগিদে। বাঁচতে হয় লড়াই করে। লড়াইটা শুরু হয় কখনো মেয়ে হয়ে, কখনো স্ত্রী হয়ে, কখনো বা মাতৃত্বের স্বাদ নিতে গিয়ে সন্তানের প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে। একটা মেয়ে ছোটবেলা থেকেই সবকিছু সহজে পায় না। তাকে বৈষম্যের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়। বড় হতে হয় অনেকগুলো না না না না–এর মধ্যে। মেয়েরা এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না। এখানে যেতে পারবে না, ওখানে যেতে পারবে না।
বর্তমান সমাজে একজন ছেলে যা করতে পারে, সেই একই কাজ কোনো মেয়ে করতে গেলে কেলেঙ্কারির শেষ নেই। শহুরে আর গ্রামীণ জীবনে এখনো ব্যাপক তফাত পরিলক্ষিত হয়। নারীদের মূল্যায়ন করতে শুধু একটা দিবস নয়, পুরো একটা জীবনের প্রয়োজন। আমাদের সমাজব্যবস্থা থেকে নারী আর পুরুষ এই বৈষম্য দূর করে বরং আমরা উভয়ই মানুষ—এটা বিবেচনায় এলে আর কোনো নারীকে শুধু নারী বলে অবহেলিত বা লাঞ্ছিত হতে হবে না। এখনো বিশ্বের কোথাও না কোথাও নারীকে নির্যাতিত হতে দেখা যায়। একটা মেয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লড়াই করে চলে।
একজন নারী দক্ষতার সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে জীবনের প্রয়োজনে হয়ে উঠে সর্বজয়া। সন্তান জন্মের সঙ্গে মাতৃত্বের যে স্বাদ পান, তা–ও তাঁকে জীবন–মরণের মধ্য দিয়ে সেই স্বাদ পেতে হয়। স্বাধীনভাবে বাঁচতে হলেও লড়াইটা একাই লড়তে হয়। মেয়েদের পথ চলা এতটাও সুখকর নয়, বড্ড হিমশিম খেতে হয় সব ক্ষেত্রে। যে মেয়ে এগিয়ে যেতে পারে সে-ই হলো সফল নারী। আর যাঁদের কপাল পোড়া, সে কেবল পিছিয়ে থাকে দুর্ভাগ্যের দোরগোড়ায় অবধি। নারীকে সঠিক পরিচয় নিজেকে নিজেই তৈরি করতে হবে। এতে করে সে আত্মনির্ভরশীল হয়ে পরিবার ও সমাজের ব্যাপক উন্নয়ন করতে পারবে। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে কিংবা সুযোগ–সুবিধা পেলে যেকোনো নারীই সফলতা বয়ে আনতে পারবে। এর জন্য দরকার আমাদের পরিকল্পনা, সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থাপনা ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি। একজন নারী তখনই শুধু যোগ্য সম্মান পাবে, যখন নারীকে নারী না ভেবে একজন মানুষ ভাববে।
শিক্ষাদীক্ষায় কোনো দিক থেকে নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তবে কেন এত বৈষম্য সৃষ্টি! নারীর প্রতি শুধু একটি দিবস পালনে এটা প্রমাণিত হয় না যে নারীদের সঠিকভাবে সম্মান করা হচ্ছে। বরং সম্মান তখনই করা হবে, যখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংসারে, সমাজে কিংবা রাষ্ট্রে নারীরা সঠিক পরিচয় আর মূল্যায়ন পাবে। নারীর প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে।
চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা