আমরা ভালো থাকি, অন্যকে বলার প্রয়োজনে

আমরা ভালো থাকি, অন্যকে বলার প্রয়োজনেছবি: কবির হোসেন

জীবন যখন সহজভাবে চলে, তখন এ নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু জীবন যখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়, তখন কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আমাদের প্রত্যেকের মনেই কোনো না কোনো ক্ষত থাকে। সেটা তখন তীব্র হয়। নিজেকে অসহায় লাগে। ক্ষতে মলম লাগিয়ে বেঁচে থাকা যায় ঠিকই, তবে অন্তরাত্মা ভীষণ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই ব্যথা পৃথিবীর কেউ দেখে না। কেউ জানে না, কার মন কতখানি পুড়ে ছাই হয়েছে নিরালায়।

জীবন এক অদ্ভুত খেলা। নৈঃশব্দ্যের ভাঙা–গড়া। এই আছে তো এই শেষ। ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে যাওয়া আত্মা হৃদয়ের জখম নিয়ে আবার লড়াই করে। বাঁচার লড়াই, সম্পর্কের লড়াই, ভালো থাকার লড়াই। অদ্ভুত এই জীবনচক্র! বড্ড অদ্ভুত লাগে মাঝেমধ্যে। এখানে কেউ ভালো নেই। তবুও চলছে জীবন। বেঁচে থাকার পুনরাবৃত্তি আর পুনর্বাসন। আমাদের প্রতিটি দিন ফুরিয়ে যায় হা–হুতাশ করে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষটির কাছে তার জীবন খুবই তুচ্ছ। কোথাও চলে যেতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচে যাওয়া।

একাকিত্বের অভিশপ্ত মানুষ রোজ দুঃখ গিলে। হাজার মানুষের ভিড়ে থাকা মানুষও কতটা ভালো থাকে, সে জানে না। আমরা প্রতিদিন ভালো থাকি, অন্যকে বলার প্রয়োজনে। ভালো থাকতে হয়। কী অদ্ভুত মানুষ আমরা। বুকের ভেতর অজস্র দুঃখ-কষ্ট লুকিয়ে কী দুর্দান্ত অভিনয় করি। জীবনের সব স্বপ্ন যখন একের পর এক ধুলোয় গড়াগড়ি খায়, তখনো আমরা মুখে হাসি নিয়ে বলি—বেশ আছি।

আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুঃখ লুকাই। দুঃখের ভার একাই বহন করতে হয়। একই নিয়মে চলছে। জীবন একেকজনের কাছে একেকরকম। সুখের সাম্রাজ্যের মানুষের কাছে যেমন, তেমনটা কিন্তু অসহায় ও দুস্থ মানুষের কাছে নয়। আর মধ্যবিত্তের কাছে তো গলার কাঁটা। তারা লজ্জায় কিছু বলতে পারে না, আবার সইতে গেলেও ভীষণ ভেঙে পড়ে। নিয়তি আজীবন তাকে তাড়া করে বেড়ায়।

লেখকের ঠিকানা: চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা