বৈশাখের পাণ্ডুলিপি

কালবৈশাখীফাইল ছবি

বৈশাখ আসে উড়ন্ত লাল চিঠির মতো—কোনো এক অদৃশ্য ডাকঘর থেকে ছিঁড়ে আনা অস্থির সময়ের পাতলা খাম। শহরের রোদে পোড়া দেয়ালগুলো এখন শঙ্খচিলের ডানায় লেখা কবিতা; ভাঙা ইটের ফাঁকে জমেছে স্মৃতির মরচে, আর বারান্দায় ঝুলছে শুকনা কাপড়ের ভেতর আটকে যাওয়া এক টুকরো বাতাস। কাকতালীয়ভাবে খুলে যায় জানালা—মেঘের কালো কফিনে ঢাকা আকাশের মুখে হঠাৎ ঝিলিক তোলে বিজলির খাঁজ কাটা রুপালি কুঠার।

নদীর জল এখন তৃষ্ণার্ত মানুষের গলার স্বর—বালির তলায় হারিয়ে যায় নৌকার দেহ, মাছেরা জানে না কোন পথে ফেরে ভেসে যাওয়া সূর্য। গলির মোড়ে একা দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছের পাতায় পাতায় জমে আছে শতাব্দীর ক্লান্তি; তার শিকড়গুলো ছুঁয়ে যায় মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা বিদ্রোহের আগ্নেয়গিরি।

প্রেম? সে তো ভোরবেলার কুয়াশার মতো—এক পলকে মিলিয়ে যায়। তবু রাতের আঁধারে কারও ঠোঁটে জমে থাকে শিশিরের গান, আর জানালার গ্রিলে আটকে যায় বৃষ্টির আগমনী। এই শহরের প্রতিটি ইট যেন কোনো না কোনো মানুষের কণ্ঠস্বর শুষে নিয়েছে—কোনোটায় জমেছে হাসি, কোনোটায় রক্তের দাগ।

দ্রোহের রং নীল থেকে লাল হয়ে ওঠে যখন মিছিলের স্লোগানে কেঁপে ওঠে অ্যাসফল্ট—তখনই বৈশাখের ঝড়ে উড়ে যায় পুরোনো পত্রিকার পাতা, ভেসে যায় রাজনীতির ফাঁকা বুলি। তবু কোনো এক মায়ের চোখে জমে থাকা জল বলে দেয়—এখানে এখনো বেঁচে আছে নদীর স্রোত, এখনো ফোটে শাপলার গোপন প্রেম।

বৃষ্টি নামলে মাটির গন্ধে মিশে যায় যুদ্ধজয়ের গল্প—একটি কাক ডানায় ভেজা স্বপ্ন নিয়ে উড়ে যায় ধানসিঁড়ির দিকে। আর রাস্তায় রাস্তায় জলের নিচে লেখা হয় নতুন কোনো মিলনের ইশতেহার; কিন্তু তা মুছে যায় টায়ারের চিহ্নে, লোকে লোকে ভরা বাসের ধোঁয়ায়।

বৈশাখের শেষে এক টুকরো রোদে শুকোয় আমার ভিজে জামা—সেখানে লেখা থাকে অদৃশ্য অক্ষরে বাংলার চিরায়ত গল্প; আগুন আর জলের দ্বন্দ্ব, শিকড় আর পাখির দ্বৈরথ, আর ধুলো হয়ে যাওয়া মানুষের ভেতরেও অঙ্কুরিত হওয়া এক গুচ্ছ সবুজ আশা।

শিক্ষার্থী, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেট