একটি দল নিয়ে আইসিসি যেভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারে!

বিরাট কোহলি–লোকেশ রাহুলের জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় নিশ্চিত হয় ভারতেরছবি: এএফপি

ছোটবেলায় পাড়া-মহল্লায় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার কথা কার কার মনে আছে? সবারই মনে থাকার কথা। জীবনের সেরা সময় তো তখনই ছিল। পাড়ার খেলায় বিভিন্ন ফরম্যাটের খেলা থাকে। এর মধ্যে একটি ফরম্যাট ছিল, যেখানে নির্দিষ্ট কোনো দল থাকত না। সবাই একা একা খেলত!

আচ্ছা, মনে করিয়ে দিচ্ছি। ধরুন, খেলোয়াড় সংখ্যা ৫ জন, যা দুই দলে ভাগ হয়ে খেলার মতো পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু খেলতে হবে। এই খেলার নিয়ম হলো, একজন একটু দূরে গিয়ে পাঁচটি দাগ দেবে। প্রতিটা দাগে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত সংখ্যা থাকবে; তবে সেগুলো ওলটপালট। সংখ্যাগুলো ব্যাট দিয়ে আড়াল করে রাখা হবে। তখন বাকি চারজন এসে নিজেদের পছন্দমতো দাগে হাত রাখবে। সবার শেষে হাত রাখবে যে এই দাগগুলো দিয়েছে সে। এবার যার সংখ্যা ১ এসেছে, সে আগে ব্যাট করবে। বাকিরা ফিল্ডিং করবে। এভাবে বাকিরাও সিরিয়াল অনুযায়ী একে একে ব্যাটিং পাবে। আর একজনের জন্য সর্বোচ্চ দুই-তিন ওভার বরাদ্দ থাকে। সবার জন্য সমান নিয়ম। প্রথম ম্যাচে যার রান বেশি হবে, সে দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করবে। বাকিরাও একই সিরিয়ালে।

শৈশবের খেলা
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

এদিকে ভারতে ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে। পাড়ার দোকানের চায়ের কাপ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব জায়গায় আড্ডার বিষয়বস্তু এখন কার হাতে উঠবে স্বপ্নের শিরোপা! বাংলাদেশ কি পারবে প্রথমবারের মতো স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখতে? নাকি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড কিংবা পাকিস্তানের ঘরে যাবে?

আমার-আপনার স্বপ্ন বাংলাদেশ হলেও আইসিসি কিংবা ক্রিকেট মোড়লরা কিন্তু তা ভাবছে না। সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্লেষক কারোরই সেমিফাইনালিস্টের তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম। প্রায় সবার সম্ভাব্য চার সেমিফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান। কেউ কেউ নিউজিল্যান্ডের নামও বলছে। এমনকি বিশ্বকাপ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চ্যানেলে বিশ্লেষণমূলক টক শোর আলোচনায় কেবল এই কয়েকটি দেশের নাম। টুর্নামেন্টে যে আরও দেশ খেলছে, তাদের নিয়ে আলোচনা করতে যেন সবাই ভুলে গেছে!

এই তো ৪ অক্টোবর, বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন আহমেদাবাদে অংশগ্রহণকারী ১০টি দলের অধিনায়কদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ক্যাপ্টেনস মিট’। সেখানে বেশির ভাগ প্রশ্ন করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের অধিনায়কের কাছে। অন্য দেশের অধিনায়কেরা যেন কেবল নিয়ম পালনের জন্য অনুষ্ঠানটিতে অংশ নিয়েছেন! সাংবাদিকদের জন্য একটি সেশন রাখা হয়। সেখানে তো বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের অধিনায়কের কাছে কোনো প্রশ্নই করা হয়নি। সব প্রশ্ন ভারত ও পাকিস্তানের অধিনায়কের কাছে ছিল। দু-একটা প্রশ্ন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কও পেয়েছেন।

ক্যাপ্টেনস মিট
ছবি: রয়টার্স

আইসিসির ইভেন্টগুলোতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ‘ক্যাপ্টেনস মিট’ এতটাই একপেশে হয়েছে যে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের কাছে পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে অনুভূতি জানতে চান সঞ্চালক রবি শাস্ত্রী!

এ তো গেল কেবল একটি ঘটনা। অন্যান্য খেলায় যেখানে বিশ্বকাপে দল সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রতিবছর চেষ্টা চালানো হয়, সেখানে আইসিসি বিশ্বকাপে দল সংখ্যা কমাতে চায়। ২০১৯ সালের পর এ বছরও মাত্র ১০টি দল বিশ্বকাপ খেলছে। এ কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের মতো দেশ এ বছর খেলতে পারছে না। যদিও আগামী বিশ্বকাপ থেকে দল সংখ্যা বাড়ার কথা। খেলাটিকে বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয় করতে হলে দলের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

তারপরও আইসিসি যেভাবে বিশ্বকাপের নাম দিয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায়, তা চক্ষুশূল। মনে পড়ে যায় ওপরে উল্লেখ করা ছোটবেলার সেই খেলার কথা। অবশ্য তারা চাইলে একটি দল নিয়ে ছোটবেলার সেই খেলার নিয়মে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারে!