মানুষের জীবন যেমন সহজ, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে জটিলতাও রয়েছে। দু-তিন মিনিটের পথ ধরে স্কুলে হেঁটে যাওয়ার জীবন শেষে পা রাখলাম কলেজজীবনে। তখনই বুঝতে পারলাম একজন শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষকে কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বুঝতে শিখেছি, ছোটবেলা থেকে যেসব মানুষের স্নেহ–ভালোবাসায় বড় হয়েছি, তাঁরা আসলে আমাকে শুধু ভালোবাসেননি, অফুরন্ত সমর্থনও করে গেছেন—আমার বেড়ে ওঠায়, আমার পথচলায়।
জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে কান্না করি। আবার চিন্তা করি, আমার পাশে তো পরিবার, আত্মীয়স্বজন সবাই আছেন। কিন্তু যাঁদের পাশে কেউ নেই তাঁদের কী হয়? আমাদের সমাজে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী অনেক মানুষকে দেখেছি, যাঁরা সারাজীবন অন্যের হাসি-তামাশার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকেন। পরিশ্রম করেও ন্যায্যমূল্য পান না। পরিবারের কাছে তাঁরা যেন পাহাড়সম বোঝা। সবকিছু সহ্য করে দিন অতিবাহিত করতে হয়।
কেন এই অমানবিকতা? যে মানুষ শারীরিকভাবে অক্ষম, সবার কি উচিত নয় তাঁদের পাশে থাকা? সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের আত্মনির্ভরশীলতার সুযোগ করে দেওয়া। অবশ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকার অনেক উদ্যোগ নিলেও তা তৃণমূল পর্যায়ে তেমন একটা দেখা যায় না। আর দেখা গেলেও এসব কেবল প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বঞ্চিত হন সমাজের মধ্যবিত্ত ও গরিবেরা। তাঁরা আত্মসম্মানের জন্য না পারেন কারও কাছে হাত পাততে, না পারেন কারও সঙ্গে কষ্টগুলো ভাগাভাগি করতে।
আবার পরিবার মাঝেমধ্যে এমন সব সিদ্ধান্ত নেয়, যা প্রতিবন্ধী মানুষটির জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। জীবনভর তাঁদের ভুগতে হয়। অর্থের বিনিময়ে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। শান্তিপূর্ণভাবে বিয়ে হলেও শ্বশুরবাড়িতে অনেক মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমাদের সমাজে জনসম্মুখে কিংবা অগোচরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
আমাদের মানসিক চিন্তাধারার পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই মানুষদের ভালোবাসতে হবে। তাঁদের অবজ্ঞা কিংবা তুচ্ছ করা যাবে না। জীবনযুদ্ধে অদৃশ্য সংগ্রাম করে যাওয়া এসব যোদ্ধার হয়তো এটাই চাওয়া।
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম