গল্প
বেলা ফুরাবার আগে
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন। এ উপলক্ষে ভালোবাসার স্মৃতিগল্প পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা। নির্বাচিত চারটি গল্প আজ প্রকাশ করা হলো।
বসন্ত বাতাসে আনমনে পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছি; চারদিকের নান্দনিক পরিবেশ আমার তৃষিত নয়নের পিপাসা মেটাতে ব্যর্থ। মিলির কথা ভাবতেই বিষণ্নতায় চোখের কোণ সজল হয়ে উঠল। বছর ছয়েক আগে মিলির অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম এই পলাশতলায়। আজকেও অপেক্ষায়। ওর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা হলেই ডায়েরি বের করে হুটহাট লিখতে বসি। আবেশে কত অবুঝ শব্দ ভুল বাক্যে প্রয়োগ হয়ে ডায়েরির ভাঁজে পড়ে আছে। আজও লিখতে বসেছি—
প্রিয় মিলি,
ফুল আর থোকা থোকা পলাশের বাহার নিয়ে ফাগুন এসেছে, কোকিলের কুহুরব তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে রোজ। ফুল দেখলে মৌনতা রক্ষা করতে পারি না। কোনো এক ফাগুনে তোমার দেওয়া ফুলগুলো এখনো রেখে দিয়েছি; বিবর্ণ হয়ে মচমচ করছে। যতটা তোমাকে আগলে রাখতাম, ততটা তোমাকেও আগলে রেখেছি। তোমার দেওয়া নীল রঙের ডায়েরিটা খুব আদরে তোরঙ্গে পুরে রেখেছি। কলমটার কালি শুকিয়ে গেছে, তবু ফেলে দিইনি।
জানো, তোমার দেওয়া ডায়েরির পাতাগুলো হলদে বর্ণ ধারণ করায় লেখা আবছা হয়ে গেছে। সেদিন খুব অস্থিরতা নিয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম। তুমিই তো বলেছিলে, পাগলের সুখ মনে মনে। হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই আমি পাগল, যার ভাবে-অনুভবে একটা মানুষ বছরের পর বছর দুরারোগ্য ব্যাধির মতো স্থায়ী হয়ে থাকে। ফাগুনে এই পলাশতলায় আমাদের কত প্রেম নিবেদন হতো, কথার রাজ্যে ডুবে যেতাম, প্রহর গড়িয়ে যেত; সময় আমাদের কাছে হার মানত। ঝরে পড়া ফুলের গালিচায় বসে তুমি গান ধরতে, ‘তুই কবে বুঝবি বল...’। ঠিকই তোমাকে বুঝেছিলাম।
মিলি, তুমি আমার অনুভবের সর্বোচ্চ বেদিতে আসীন হয়ে আছ। এখনো গভীর নিশিতে তোমার কাছে লিখি, বিড়বিড় করে কথা বলি। নিজের প্রতি এত অভিযোগ কেন জানো? তোমার হরিণচোখ জোড়ায় তাকিয়ে ছিলাম বলেই পৃথিবীর আর কোনো সৌন্দর্যের মোহে আচ্ছন্ন হতে পারছি না।
লিখতে লিখতে বেলা ফুরিয়ে এল। লালচে আভার হাতছানিতে সন্ধ্যা নামল। নীড়ের সন্ধানে একটা পাখি উড়ে গেল দূরাকাশে। অপার বিস্ময়ে চেয়ে রইলাম পাখিটির দিকে।
বন্ধু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা