কিছু লিখতে চায় না মন
আজ আর কিছু লিখতে চায় না মন। কলমের কালি লাল কেন? রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আকাঙ্ক্ষা। পাকা ধানে কে দিল মই? মায়ের বানানো মোয়াটা, নারকেলের লাড়ুটা কি শিকায় থেকে যাবে? আর বলবে না খোকা, ‘মা, আমার ভাপের পিঠা, খেজুর গুড়ের পায়েস কই?’ বোন আর পাবে না ভাইয়ের আদর। হবে না খাবার নিয়ে খুনসুটি! মেয়ে কি আর বলবে, ‘মা মা, আমার মাথার কেশটা ভালো করে বেঁধে দাও, আমি জ্ঞান ধরতে যাব!’
দানবের উৎপাতে শূন্য হয়ে গেল পড়ার টেবিল। বারান্দার ইজিচেয়ার, বালিশ, কোলবালিশ, পালং, চাদর—সবকিছুজুড়ে হাহাকার। মালিকেরা কই! তারার গায়ে লটকে গেল শত শত আইডি কার্ড! ভাতের থালা, গতরের কাপড়, গলার মালা থেকে আর্তনাদ ভেসে আসে, ‘ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও, আমাদের আগের জীবন। এত একাকী কার ভালো লাগে বলো!’ শখ করে যে ফুলের বাগান গড়ে তোলা, কী লাভ হলো বলো? ফুল ফোটার আগে মালীরাই ঝরে গেল দমকা ঝড়ে! বাগানে অল্প যে কয়েকটি ফুল ফুটে ছিল, তা–ও হুতুমপ্যাঁচা নষ্ট করে দিয়ে গেল পদদলিত করে!
কই যাব, কই পাব তাদের আহারে! শিক্ষাঙ্গনের আঙিনা, বেঞ্চ, সবুজ চত্বর—হু হু করে কেঁদে কেঁদে মরে, ‘তারা কই, তারা কই গেল, তারা কই!’ বোবা কান্নায় শুকিয়ে গেছে চারপাশ। আটকে গেছে সব আয়োজন। আপনজনেরা আজ মাটির ঘরে অধিকার আদায়ে কাফনে মোড়ানো নিথর বেশ। নেটওয়ার্ক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার—কোনো কিছুতেই তারা আসে না। সবকিছুতেই ঝাপসা আসে! ডিলিট হয়ে গেছে থোকা থোকা তাজা প্রাণ, তাজা সম্ভাবনা! আহারে, কে দেবে সান্ত্বনা, কোথায় পাব হারিয়ে যাওয়া ধন। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দেশকে এত ভালোবাসে, ভাবতেই ঝাপসা হয়ে আসে নয়ন। তাই কিছু আর লিখতে চায় না মন।
এনায়েতপুর, চৌহালী, সিরাজগঞ্জ