‘আরেক ফাল্গুন’: অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার চিরকালীন প্রতিশ্রুতি

জহির রায়হানের লেখা ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা একটি উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’।
ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক রচিত সাহিত্যকর্ম গুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা সাহিত্য হিসেবে বিবেচিত
বইটি। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে যা তৎকালীন গন- অভভুত্থান নতুন মাত্রার
শক্তি দিয়েছিল। নির্মম স্মৃতি বিজরিত ভিক্টোরিয়া পার্কের বর্ননা দিয়ে ঔপন্যাসিক উপন্যাসের
সূচনা করেন। এরপরই দেখা যায়, সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট পরিহিত পা-জোড়া খালি একটি ছেলে
নবাবপুরের দিকে হেটে যাচ্ছে। এই ছেলেটিই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মুনিম।
১৯৫২ সাল হয়ে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলন, জনতার সম্মিলন,
ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং তাঁদের প্রেম-প্রণয় ইত্যাদি উপন্যাসটির মূল
বিষয়বস্তু। জাতীয় জীবনের অগ্নিমুখী পরিস্থিতিতে জহির রায়হান আলো–আঁধারের
দোদুল্যমানতা থেকে উপন্যাস অন্তর্গত চরিত্রসমূহকেই কেবল মুক্তিদান করেননি, জাতির সম্ভাবনাময়
ভবিষ্যৎকেও প্রত্যক্ষ করেছেন। মুনিম, আসাদ, সালমা, কবি রসুল, ডলি—তারা প্রত্যেকেই একুশের
চেতনাকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে যেন এক শৈল্পিক ব্যঞ্জনায়।

মানবচেতনা বেশ আশ্চর্যজনক একটা ধাঁধা। কিন্তু এই ধাঁধা থেকে যখন কোনো আবেগনিঃসৃত বোধের
উদয় হয়, তখন তার জন্য মানুষ জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। এভাবেই হয়তো একটা সময় মানুষ
তাদের বসবাসের ভূমিকে নিজের মনে করতে থাকে এবং নাম দেয় নিজের দেশ হিসেবে। জেগে ওঠে
তাদের মনে দেশাত্মবোধ। এরপর যখন অন্য কোনো ভূখণ্ডের মানুষ সেই ভূখণ্ডে আগ্রাসন বা শাসন
চালানোর চেষ্টা করে; তখন সেই উদিত আবেগনিঃসৃত দেশাত্মবোধ দিয়ে মানুষ তার জন্মভূমির
জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। এ উপন্যাসে এমনই দেশপ্রেমের দিক উঠে এসেছে। বাংলার
ছাত্র সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে , অত্যাচারীর বিরুদ্ধে কীভাবে রুখে দাঁড়ায় নিজের জীবনকে
তুচ্ছ করে তাঁর এক অসাধারণ চিত্রকল্প ফুটিয়ে তুলেছেন জহির রায়হান  তাঁর  এই
উপন্যাসে ।