‘বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ বইটিতে লেখক সমাজের খুঁটিনাটি সমস্যা, হতাশা ও তাদের জীবন–জীবিকার বিশদ বর্ণনা করেছেন।
‘বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ সালাহউদ্দিন মাহমুদের পঞ্চম গল্পের বই। বইটিতে মোট ১৩টি গল্প স্থান পেয়েছে।
সালাউদ্দিন মাহমুদের গল্প বরাবরই জীবনের কথা বলে। লেখায় নানাবিধ সংকট উঠে আসে। ভালোবাসা, হিংসা, মানবিকতা, জীবনযুদ্ধ, রহস্য, নিম্নবিত্ত, স্বপ্ন, সম্ভাবনা, প্রবৃত্তি, সংকট, হতাশা এবং জীবনস্মৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
‘বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ বইটির ফ্ল্যাপের অংশটুকুতে মূলত লেখকের আগের ও বর্তমান লেখনীর বিষয়ে একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে। মোট ১৩টি গল্পের বিভিন্ন জনরার সমন্বয়ে লেখা চমৎকার একটা বই।
গল্প—১ ‘বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’
মানুষের জীবনে প্রিয়জনের অযত্ন–অবহেলায় কতটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, নিশ্বাস নিতেও অস্বস্তি হয়। বিষণ্নতা বিভ্রমে বোধ বিবেচনা হ্রাস পেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাওয়া হতাশাগ্রস্ত যুবককে নিয়ে লেখা গল্পটি।
গল্প—২ ‘হালিমে আঙুলের হদিস’
এই গল্পে একজন দরিদ্র স্বামী তার স্ত্রীর ধর্ষণের শাস্তি দেয় নিজ হাতে। আর স্ত্রীকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় অবিচল থাকে শেষ পর্যন্ত। অশিক্ষিত গরিব হলেও যে স্ত্রীকে ভালোবাসা, সম্মান দেখানোর মনমানসিকতা পাহাড়সম হতে পারে, এই গল্পে শেখার আছে পুরুষদের।
গল্প—৩ ‘জলের ভেতর অনল’
মূলত এ গল্পটিও একটি গরিব পরিবারকে ঘিরে। বাবা তার মেয়েকে নিয়ে বিষণ্ন থাকে, এদিকে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ। সব জোগালে শেষ রক্ষাই যেন আর হয় না তাদের।
গল্প—৪ ‘রবিতনের অন্তিম সংযম’
এ গল্পটিতে মা তার করা ভুলে ছেলের ও নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলেছে। পুরুষ মানুষের প্ররোচনা আর লোভ—দুটি মিলে জীবন নরক হয়ে গেছে।
গল্প—৫ ‘নুন আনতে জীবন ফুরায়’
মানুষ গরিব হলে, সঙ্গে কপাল খারাপ হলে সৎ থেকেও লাভ হয় না। একটার পর একটা বিপদ যেন ছায়ার মতো পিছু ছাড়ে না! এ গল্পটিতে সেটাই উঠে এসেছে।
গল্প—৬ ‘একটি মসজিদের ইতিবৃত্ত’
এ গল্পটিতে গ্রামের মুসল্লিদের ধর্মের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস, পবিত্রতা ও সবার একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার মানসিকতার একটা সুন্দর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
গল্প—৭ ‘কাচ ভাঙা স্বপ্ন’
একজন লেখক কতটা ত্যাগী হয়, ডেডিকেশন থাকে তাদের লেখায়। স্বপ্ন দেখে তাদের লেখা একদিন স্বীকৃতি পাবে পাঠকসমাজে—সেটাই তুলে ধরেছেন লেখক।
গল্প—৮ ‘আঁচলে বাঁধা চিরকুট’
এই গল্পে ধনী-গরিবের ভালোবাসা ও পরিবার-সমাজ তাদের না মেনে যন্ত্রণায় আচ্ছন্ন করে ফেলার বিষয়টি তুলে ধরেছেন লেখক। যেখানে প্রেমিক হেরে যায় বাস্তবতার কাছে।
গল্প—৯ ‘আদিম লালসার খদ্দের’
এই গল্পে যুবক তার প্রেমিকার কাছে প্রতারিত হয়ে খারাপ পথে পা বাড়ায়। অন্যদিকে তেমনই কোনো যুবকের প্রতারণার শিকার হয়ে খারাপ পথের বাসিন্দা এক সুন্দরী তরুণী।
গল্প—১০ ‘কলেরাকালের দিনলিপি’
এই গল্পে কলেরায় আক্রান্ত সন্তানের শিয়রে জেগে সেবা–শুশ্রূষায় রাত্রিযাপন করে মা। নাড়িছেঁড়া ধনকে হারানোর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত মা। গ্রামে এখনো যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বেহাল রয়েছে, সেটি তুলে ধরেছেন লেখক।
গল্প—১১ ‘অন্ধকারের শেষ সীমান্তে’
এই গল্পে গ্রামের প্রভাবশালীর নষ্ট সন্তানের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বাবা-মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনের এ অবস্থায় আহাজারি আর স্রষ্টার কাছে বিচার দেওয়া ছাড়া কিছুই করা থাকে না যেন তাদের।
গল্প—১২ ‘মায়ের হাতের মলিদা’
অভাবের সংসারেও বাবা-মা চেষ্টা করে যতটা সম্ভব সন্তানদের আবদার মেটাতে। এই গল্পে লেখক সেসব অতীত স্মৃতি ভেবে ব্যথিত হৃদয়ের কান্না তুলে ধরেছেন।
গল্প—১৩ ‘মুঠোফোন এবং মমতাময়ী মা’
মায়েরা সব সময় মমতাময়ীই হয়। জমানো টাকাপয়সা থেকে আদর–ভালোবাসা, সবই থাকে তাদের সন্তানদের ঘিরেই। লেখক মায়ের ভালোবাসার দিকটি তুলে ধরেছেন এই গল্পে।
‘বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ বইটিতে লেখক সমাজের খুঁটিনাটি সমস্যা, হতাশা ও তাদের জীবন–জীবিকার বিশদ বর্ণনা করেছেন। বইটি পড়ে মনে হলো লেখক গরিব দুঃখী মানুষের কষ্টটা বোঝেন এবং তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের লেখা সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক হবে বলে আশা রাখছি। পাঠকসমাজও উপকৃত হবে এ ধরনের শিক্ষণীয় হৃদয়স্পর্শী গল্প পড়ে।
একনজরে
বই: বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম
লেখক: সালাহউদ্দিন মাহমুদ
ধরন: গল্পগ্রন্থ
প্রকাশনী: কিংবদন্তী পাবলিকেশন
প্রচ্ছদ: সাদিয়া তারান্নুম
মলাট মূল্য: ২৫০ টাকা
পৃষ্ঠা: ৯৬
সাধারণ সম্পাদক, গাইবান্ধা বন্ধুসভা