ইজিচেয়ারে বসে আনমনে বর্ষার এই সন্ধ্যায় আজাদ সাহেব বারান্দার গ্রিলের ফাঁক গলে দৃষ্টি মেলে ধরেছেন যতটা চোখ যায়, ততটা দূর। এমন দিনে সবকিছুই তার ভালো লাগে। যেমন কন্যা ইরার হাতের ধূমায়িত এককাপ চা। ভাবতে যতটা দেরি হলো, ইরার চা নিয়ে হাজির হতে তেমন দেরি হলো না। মেয়ের দিকে আদুরে চোখে তাকিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিলেন।
‘তোমার পাশে একটু বসি বাবা?’
‘বোস, এতে অনুমতি নেওয়ার কী আছে?’
‘মাত্র বাসায় এসেই বারান্দায় বসেছ। তা আজ কোথায় কোথায় গেলে?’
‘আজ অনেক জায়গায় গিয়েছি রে মা। বৃষ্টিতে ভিজেছি। তার আগে অবশ্য ড্রাইভারকে বিদায় করে দিয়েছি। নিজেই ড্রাইভ করলাম। ড্রাইভার আবার তোর মাকে বলে দিতে পারে, সেই ভয় ছিল।’
আজাদ সাহেব বলতে লাগলেন, ‘জানিস মা, শহর থেকে বেরিয়ে দুপাশে ধানখেত, মাঝে কাঁচা রাস্তা, ঝুমবৃষ্টি...আহ! আমি অনেকটা পথ গিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা কী জানিস, আজ রংধনু দেখেছি। আরেকটু সামনে এগোতেই একটা খাবারের দোকান পেলাম। তেমন জৌলুশ না থাকলেও প্রতিটা খাবারের আলাদা আলাদা গন্ধ পাচ্ছিলাম। তোকে বোঝাতে পারব না যে কী বিপদেই না পড়েছিলাম! আমি খিচুড়ির লোভ সামলাতে পারি না, তুই তো জানিস। ওদের খাবারের দোকানে যে কার্ড সিস্টেমে পে করা যায় না, জানতাম না। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, দোকানের মালিক এসে আমায় জানাল যে বিল দিতে হবে না। যাক, ওসব ঝামেলা চুকিয়ে আমি আবার সেই মেঠো পথ ধরে ফিরে এলাম। চুপি চুপি ঘরে ঢুকে সোজা এখানে।’
‘আমাকে আর মাকে একদিন নিয়ে যেয়ো।’
‘তোরা তো যেতেই চাস না।’
‘নিয়ে যেয়ো একদিন বাবা। যাক ভালোই কেটেছে তাহলে দিনটা। শোনো বাবা, মা লাউয়ের পাতা দিয়ে একধরনের বড়া বানিয়েছে, এনে দেব? কটা মুড়ি মেখে দিই সঙ্গে?’
‘ধ্যাত! এসব খেতে ভালো লাগবে এখন? আমার পেট ভরে আছে। পরিপাকতন্ত্র আগে খিচুড়িটা আলাদাভাবে হজম করে নিক।’
‘বাবা! তোমাকে ওষুধ খেতে হবে। সারাটা সকাল এখানেই নাকি বসে ছিলে? মা বলল। এসো, আমি আমার কাঁধে ভর করে তোমাকে শুইয়ে দিয়ে আসি। সারা দিন বসে থেকে থেকে তোমার শরীর আরও খারাপ হচ্ছে।’
আজাদ সাহেবের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।