বরকত

অলংকরণ: তুলি

অনেক দিন আগের কথা। এক বৃদ্ধ লোকের চার ছেলে। স্ত্রী অনেক আগে মারা গেছেন। ছেলেপুলেরাই তার দেখাশোনা করে। বৃদ্ধ লোকটি হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে ছেলেদের ডেকে বলল, তোমাদের মধ্যে যে আমার সেবা-শুশ্রূষা করবে, তাকে সম্পত্তির ভাগ দেওয়া হবে না। এখন ভেবে দেখো, তোমরা কী করবে।
বাবার এমন কথা শুনে ছোট তিন ছেলে সেবা-শুশ্রূষা বন্ধ করে দিল। বড় ছেলে তালিব আগের মতোই বাবার সেবা করে যেতে লাগল।
এটা দেখে বৃদ্ধ পিতা তালিবের ওপর খুশি হয়ে সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করলেন যেন তার ইনকামে বরকত বাড়ে। তবে তালিব এ কথা জানত না। সে নিজ থেকেই বাবার সেবা আরও বাড়িয়ে দিল।

কিছুদিন পর বৃদ্ধ লোকটি মারা গেলেন। ছোট তিন ছেলে বাবার সব সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ করে নিল। তালিব কিছুই পেল না। তার স্ত্রী রাগ করে বলল, তোমার মতো এত বোকা মানুষ এই দুনিয়াতে নেই!
তালিব মুচকি হেসে জবাব দিল, ধনসম্পদ পাইনি তো কী হয়েছে! বাবার দোয়া আছে। সেটাই আমার জন্য বড় সম্পদ। স্ত্রী কিছু বলল না। সামনে থেকে চলে গেল।
সংসারে অভাব চলছে তালিবের। স্ত্রীও এখন আর ঠিকভাবে কথা বলে না। হঠাৎ এক রাতে স্বপ্নে তাকে কেউ একজন বলছে, অমুক জায়গায় ১০০টি স্বর্ণমুদ্রা রাখা আছে। তুমি সেগুলো নিয়ে এসো। তালিব জিজ্ঞেস করল, তাতে কি বরকত আছে? জবাব এল, না।

সকালে তালিব তার স্ত্রীকে স্বপ্নের কথা খুলে বলে। স্ত্রী খুশি হয়ে সেগুলো দ্রুত নিয়ে আসতে তাড়া দেয়। কিন্তু বলল, এটা আনা যাবে না।
কেন? স্ত্রী রাগান্বিত হয়ে বলল।
এটিতে বরকত নেই।
সংসারে এত অভাব, আর উনি বরকত বরকত করছে!
পরদিন আবার একই স্বপ্ন দেখে তালিব। এবার অন্য একটি জায়গায় ১০টি স্বর্ণমুদ্রা রাখা আছে। তালিবের একই প্রশ্ন, সেখানে বরকত আছে? জবাব আসে, না। সকালে স্ত্রীর কাছে স্বপ্নের কথা খুলে বলে সে। স্ত্রী আরও বেশি রাগান্বিত হয়ে বলে, কাল ছিল ১০০টি স্বর্ণমুদ্রা, আর আজ মাত্র ১০টি। সেই ১০টিও তুমি আনলে না, বাহ! খুব ভালো করেছ। তালিব কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে রইল।
পরদিন আবারও স্বপ্ন দেখে সে। এবার কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক জায়গায় একটি স্বর্ণমুদ্রা আছে। তুমি সেগুলো নিয়ে এসো। তালিবের একই প্রশ্ন, বরকত আছে? জবাব আসে, হ্যাঁ।
তালিব খুব খুশি হয়ে পরদিন স্বর্ণমুদ্রা আনতে গেল। সেটি নিয়ে বাজারে গিয়ে দেখে এক জেলে বড় বড় মাছ নিয়ে বসে আছে। অভাবের কারণে অনেক দিন মাছ কেনা হয় না। তাই স্বর্ণমুদ্রাটির বিনিময়ে একটি বড় মাছ কিনে বাড়ি ফিরল সে। মাছ দেখে স্ত্রী খুশি। পরমুহূর্তেই আবার স্বামীর ওপর রাগ ঝাড়ল। এত দামি মুদ্রা দিয়ে কেউ মাত্র একটা মাছ কেনে! এত বোকা কেউ হয়! কী আর করার, স্বর্ণমুদ্রাটি তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না।

হঠাৎ রান্নাঘর থেকে স্ত্রীর গলার আওয়াজ। মাছ কাটতে গিয়ে দেখে পেটের ভেতর অচেনা একটি পাথর। আশ্চর্য হয়ে স্বামীকে দেখাল। তালিবও অবাক! স্ত্রীকে বলল, পাথরটি বাজারে স্বর্ণকারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যাও! যাও! এক্ষুনি যাও।
স্বর্ণকারও দেখে অবাক। জিজ্ঞেস করল, এত দামি পাথর কোথায় পেয়েছেন? তালিব মুচকি হেসে জবাব দিল, বাজার থেকে বড় দেখে এক মাছ কিনেছিলাম। সেটার পেটের মধ্যে পেয়েছি। স্বর্ণকার সৎ মানুষ। কোনো কিছু না লুকিয়ে বলল, এই পাথরের দাম এত বেশি যে বাজারের সব স্বর্ণ বিক্রি করলেও মূল্য কম পড়বে। আপনি মহারাজের কাছে নিয়ে যান। তিনিই কেবল এটার দাম দিতে পারবেন।
তালিব চলে গেল মহারাজের দরবারে। পাথরটি দেখে স্বর্ণকারকে দিয়ে পরীক্ষা করালেন রাজা। স্বর্ণকারেরা সবাই বলল, মহারাজ, পাথরটি এত দামি যে আপনি যতই মূল্য দেন, তা কম হবে। মহারাজ খুশি হয়ে তালিবকে পাথরের মূল্য হিসেবে ১০টি উট বোঝাই করে ধনসম্পদ দিলেন। সে খুশি হয়ে সেগুলো নিয়ে বাড়িতে ফিরে এল।

শালিখা, মাগুরা