মোশতাক আহমেদের ‘স্বপ্নস্বর্গ’

মোশতাক আহমেদের ‘স্বপ্নস্বর্গ’

জীবন মানুষকে কখন যে কোন জায়গায় নিয়ে যায়, তা বলা মুশকিল। প্রত্যেকের জীবনেই ভালোবাসা আসে আশীর্বাদ হয়ে। মানুষ সে ভালোবাসায় স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে শিখে আনন্দের সঙ্গে। কিন্তু যখন সে ভালোবাসার অভাবে পরিণত হয় কিংবা ঘাটতি হওয়ার পথে মোড় নেয়, তখন ভালোবাসা পাওয়া মানুষটা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সে কী করবে ঠিক বুঝতে পারে না। আবার যা করে বসে সেটার ফলাফল অনুমান না করেই করে। কারণ, তখন তার সচেতন মন কাজ করে না, সে স্বাভাবিক থাকে না। এই অস্বাভাবিক মানসিকতা সৃষ্টি করে নতুন প্রেক্ষাপটের। একের অধিক ব্যক্তি যুক্ত হয়, রহস্য তৈরি হয়, পরিবেশ বদলে যায়, অতীত উল্টে যায়, বেঁচে থাকার আশা ফুরায়, কল্পনায় সুখ খোঁজে মন, সাজালেও ভেঙে যায় শত স্বপ্নে বোনা ঘর, প্রত্যাশিত চাওয়া পূর্ণ না হওয়ায় মানুষ পুরোপুরি অস্বাভাবিক হয়ে যায়। চারপাশে হতাশা ছাড়া তখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। জীবনে সব সময় যা আসে, তার সবকিছু আশীর্বাদ নয়, দেখা গেলেও সেটা মাঝেমধ্যে অভিশাপে রূপ নেয়। নিয়মমাফিক জীবনে ঝড় তৈরি করে, কালো পর্দায় ঢেকে যায় সম্ভাব্য সব আলোর রেখা। জীবনে অতি তীব্র কিছু গ্রহণ করার আগে অতিমাত্রায় না হলেও সময় নিয়ে পরিমিত কিংবা স্বল্পমাত্রায় চিন্তা ভাবনা করে নেওয়া উচিত।

তেঁতুলগাছ থেকে পরিচিত পাওয়া তেঁতুলবাড়ির নিরবের জীবনেও ভালোবাসা এসেছিল ফারিয়ার কারণে। অর্থনৈতিক পার্থক্যের পরও তাদের ভালোবাসার বন্ধন অটুট ছিল। কিন্তু প্রচলিত কথায় সময় যেমন পাল্টে যায়, তেমনি বদলে গিয়েছিল ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে ফারিয়া। দূরত্ব তৈরি করেছিল নিরবের সঙ্গে এবং প্রতিষ্ঠিত ধনী ছেলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছিল। কিন্তু সে সময় একটা ঘটনা ঘটে যায়, ফারিয়া খুন হয়, তাকে কেউ হত্যা করে। শুরু হয় নিরবের জীবনের নতুন ঝড়।

নিরবের নামে মামলা করে ফারিয়ার বাবা। নিরব অস্বাভাবিক হয়ে যায়, কল্পনায় নিজের তৈরিকৃত জগৎ স্বপ্নস্বর্গে চলে যায় সে প্রায়ই। সেখানে সে ফারিয়ার সঙ্গে চা-বিস্কুট খায়, ঘোরাঘুরি করে এবং চলে আসে পৃথিবীতে। এসব থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করে তার বোন নিশাত। তিনি ডা. তরফদারের শরণাপন্ন হন ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য। শবনম নামের প্রশিক্ষিত একজন নার্সও রাখা হয়।

শবনমের চিকিৎসা ও ভালোবাসায় নিরব সুস্থ হয়ে ওঠে। তাদের ভাব বিনিময় হয়, বিয়ে হয়, নিশব নামের একটি ছেলেসন্তানও হয়। কিন্তু ফারিয়ার হত্যাকাণ্ডের মামলা নিরবের পিছু ছাড়ে না। সে আবার অস্বাভাবিক হয়ে যায়। যে অস্বাভাবিকতার বলি হয় শবনম, যে এতিম মেয়েটি তাকে সুস্থ করে তুলেছিল, বিয়ে করে সংসার সাজিয়েছিল, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, নিরবকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, তাকেই নিরব শেষ করে দেয়।

নিরব ফারিয়াকে হত্যা করে কি না, তা প্রমাণিত হয় না। মানসিক ভারসাম্যহীন বলে শবনমের বলি হওয়ার বিচারও হয় না। এ ছাড়া নিরবের অতি প্রত্যাশিত ফাঁসিও হয় না মানসিক রোগী হওয়ার ফলে। তার শেষ আশ্রয় হয় পাগলাগারদে।

একনজরে
বই: স্বপ্নস্বর্গ
লেখক: মোশতাক আহমেদ
ধরন: উপন্যাস (প্যারাসাইকোলজি)
প্রকাশক: আফজাল হোসেন
প্রকাশনী: অনিন্দ্য
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রথম প্রকাশ: মাঘ ১৪২৫, ফেব্রুয়ারি ২০১৯
মূল্য: ৩৫০ টাকা মাত্র

বন্ধু, নরসিংদী বন্ধুসভা