পেতে চাও বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি

পড়াশোনাছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারিবা ইসলামের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। ছোটবেলা থেকে তাঁর নানা বিষয়ে শেখার আগ্রহ। কলেজে পড়ার সময় একবার ভর্তি হয়েছিলেন ফটোগ্রাফি কোর্সে। কিন্তু নিয়মিত পড়াশোনার চাপে সে কোর্স আর বেশিদূর এগোয়নি। তখন মনকে প্রবোধ দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফুরন্ত সময়ে নিশ্চয় আগ্রহের সবকিছু শিখে ফেলবেন! কিন্তু ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশনের চক্রে পড়ে সেসব যেন বেমালুম ভুলতেই বসেছিলেন। আর তখনই এক নতুন রাজ্যের খোঁজ পেলেন তিনি। বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বৃত্তিবিষয়ক তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে তাঁর নজর পড়ে মেনুবারের ‘অনলাইন এডুকেশন’ নামটি। সে অপশন তাঁকে নিয়ে যায় ‘কোর্সেরা’ নামের নতুন রাজ্যে। যেখানে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে দেওয়া বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স সমাপ্তির সনদ। তারপর তাঁকে আর আটকায় কে! কয়েক মাস পেরোতেই প্রাচীন সভ্যতা, জলবায়ু পরিবর্তন, একুশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিনা পয়সায় কোর্স করার সুযোগ হলো তাঁর। এ গল্প শুধু ফারিবা ইসলামের একার নয়, হালের তরুণেরা ইন্টারনেটে দৈনন্দিন কাজের বাইরে যুক্ত হচ্ছেন অনলাইন পড়াশোনার দুনিয়ায়।

অনলাইন কোর্স কী
সরল কথায়, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে এই অনলাইন কোর্স। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা পৃথিবীর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু করেছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিগতভাবেও অনলাইনে কোর্স আহ্বান করা হয়। এই কোর্সগুলো মূলত দুইভাবে করানো হয়—অর্থের বিনিময়ে কিংবা নিখরচায়। তবে বিনা মূল্যে কোর্সের ক্ষেত্রেও সনদ সংগ্রহ করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। এই কোর্সগুলো বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। মূলত তিন সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাসও হতে পারে।

কেন করব অনলাইন কোর্স
ঘরে বসে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কোনো কোর্স করার এটি একটি অভিনব সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যে ক্লাস চলছে, সেই ক্লাসই বিশ্বের অন্য কোনো দেশের শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে স্কাইপে।

আমাদের চাকরির বাজারে কিংবা পেশাগত ক্ষেত্রে এই কোর্সগুলোর গুরুত্ব কেমন? এই প্রশ্নের উত্তরে খুব জুতসই জবাব হয়তো এখনো তৈরি হয়নি। কারণ, পেশাগত সনদি কোর্সের বাইরে চাকরির বাজারে এই কোর্সগুলোর খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা নেই। তবে অনলাইন কোর্স জানার পরিধি বাড়িয়ে দেয়। যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সচরাচর জানার বা শেখার সুযোগ কম। তা এই কোর্সগুলোর মাধ্যমে খুবই সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। চাকরি বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে এই সনদের গ্রহণযোগ্যতা এখন অবধি খুব একটা তৈরি হয়নি। তবু শেখা তো হলো, এ-ই বা কম কী! শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এ ধরনের কোর্সের বিস্তার দিন দিন আরও বাড়বে।

যে বিষয়ে কোর্স
ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, কলা ও সংস্কৃতি; ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা; যোগাযোগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রকৌশল, ভাষা, আইন, গণিত, সাহিত্য, নৈতিকতা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, খাদ্য ও পুষ্টি; সংগীত, তথ্যপ্রযুক্তিসহ কতশত বিষয়ে যে কোর্স হয়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানা গেল, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ২০০ কোর্স আহ্বান করেছে। আর এই কোর্স করতে যুক্ত রয়েছে ৩৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থী।

যেভাবে পাবেন খোঁজ
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে জানা যেতে পারে আসছে কোর্স সম্পর্কে। এর বাইরে শুধু অনলাইন কোর্সবিষয়ক বিশেষায়িত বিভিন্ন ওয়েবসাইটও রয়েছে; যারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আহ্বান করা কোর্স সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে। এর বাইরে বিশেষায়িত ওয়েবসাইটগুলোও বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স পরিচালনা করে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ওয়েবসাইট সম্পর্কে।

এডেক্স
বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআইটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করে এডেক্স (www.edx.org)। শিক্ষাজগতে বিপ্লব আনতেই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তৈরি করেছেন এই ওয়েবসাইট। শুরুতে এমআইটির শিক্ষকেরা এমআইটিএক্স নামের প্রকল্পের মাধ্যমে অনলাইন কোর্স চালু করেন। সারা বিশ্বের প্রায় সাত মিলিয়ন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে এই ওয়েবসাইটে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৭০০ বিষয়ের ওপর বিনা মূল্যে কোর্সে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে অনলাইনে।

কোর্সেরা
বর্তমানে প্রায় ১৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর অনলাইন পড়াশোনার অন্যতম মাধ্যম হলো কোর্সেরা (www.coursera.org)। ইংরেজি, স্প্যানিশ, চায়নিজ, রুশ, জার্মানিসহ ১২ ভাষায় কোর্স করার সুযোগ রয়েছে এই ওয়েবসাইটে। যেখানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার সায়েন্স, চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতিসহ ২৮টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। অনলাইন কোর্সের বিশেষায়িত ওয়েবসাইট বর্তমানে প্রায় দুই হাজার কোর্স করানো হচ্ছে!

ওপেন কোর্সওয়্যার কনসোর্টিয়াম সারা বিশ্বে বিনা পয়সায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কোর্স প্রদান করে, এমন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় ওপেন কোর্সওয়্যার কনসোর্টিয়াম (www.ocwconsortium.org)। বর্তমানে প্রায় ৫০টি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই কনসোর্টিয়ামে। এই কনসোর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারও অনলাইন কোর্সে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

শুধু এডেক্স বা কোর্সেরাই নয়, এ ছাড়া রয়েছে উদাসিটি (www.udacity.com), www.udemy.org, ফিউচার লার্নসহ (www.futurelearn.com) নানা ওয়েবসাইট।
জানা তো হলো, আজ থেকেই তাহলে শুরু হোক অনলাইনে শেখা ও পড়ার নতুন অধ্যায়।

প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের প্রকাশনা ‘লেখার ইশকুল’, প্রথম সংখ্যা, জুন ২০১৬ থেকে নেওয়া।