শরীর এবং মন—এ দুই নিয়ে হচ্ছে মানুষ। শারীরবিহীন যেমন মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তেমনই মনবিহীন মানুষও অসম্ভব। সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে গেলে সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক চাপ
চাপ হলো একটি সাধারণ অনুভূতি। এটি আমাদের জন্য ভালো হতে পারে, আবার কখনো মন্দও হতে পারে। চাপ লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করতে পারে। আর যদি স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে, তখন আবার এটি অস্বাস্থ্যকর; অর্থাৎ যে কাজটি যেভাবে করতে চাই, তা যখন পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে করতে পারি না, তখন আমরা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করে থাকি। আমাদের চাহিদা এবং ক্ষমতার মধ্যে যখন একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তখন নিজের মধ্যে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাকে মানসিক চাপ বলি।
আমরা অনেকেই দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে হিমশিম খাই। জন্মগতভাবে মানুষ বলেই আমাদের মধ্যে রাগ, কষ্ট, দুঃখ, চাপ, ভয়, আতঙ্ক, অস্থিরতা, দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব থাকে। কেউ আবার এই অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে না পারায় জমিয়ে রাখি, যা আমাদের শরীর ও মনের মধ্যে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। মনে চাপ সৃষ্টি হয়। আমরা বিমর্ষ হয়ে পরি। দেখা দেয় বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি। তখন কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না। অন্যরাও যেন ভুল বুঝতে শুরু করেন। বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়, বন্ধু—সবাই। কর্মক্ষেত্রে ও সম্পর্কজনিতও সমস্যা তৈরি হয়। নিজের প্রতি নেতিবাচক চিন্তা কাজ করতে থাকে। কাজকর্ম, পড়াশোনায় অমনোযোগী, এমনকি জীবন সম্পর্কে অনীহা কাজ করতে শুরু করে। দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। চাওয়া অনুযায়ী কোনো প্রত্যাশা পূরণও করা হয় না।
মানসিক চাপের ফলে যেসব পরিবর্তন হয়
মানসিক চাপের ফলে আমাদের শারীরিক, আবেগীয় ও আচরণগত বিভিন্ন রকম পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে বুক ধড়ফড় করা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, অনিদ্রা, মাথাব্যথা, বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটব্যথা ও ঘাম হওয়া অন্যতম। আবেগীয় যে পরিবর্তনগুলো দেখা যায় সেগুলো হলো, অত্যাধিক রাগ, বিষণ্নতা, উত্তেজনা, হতাশা, কষ্ট, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অপরাধবোধ ও অস্থিরতা। আচরণগত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে, অমনোযোগিতা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ, অলসতা বা অনীহা, অকারণে হাঁটাহাঁটি করা, চিৎকার–চেঁচামেচি করা, কান্নাকাটি করা, ভুলে যাওয়া, খাবারে অরুচি বা অত্যধিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা।
সব স্ট্রেস বা চাপ খারাপ নয়। কিন্তু অত্যধিক মানসিক চাপ বা দীর্ঘ সময়ের জন্য চাপ অনুভব করলে স্বাস্থ্যসমস্যা হতে পারে। সে জন্য স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা করা অন্যান্য অবস্থার জন্য ঝুঁকি কমাতে পারে। যেমন হৃদ্রোগ, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং বিষণ্নতা।
চাপ কমাতে কিছু পদক্ষেপ
• কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং সীমা নির্ধারণ করে, সময় এবং শক্তিকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা।
• বিশ্রামের জন্য সময় বের করে বিশ্রাম নেওয়া।
• পুরোনো স্বাস্থ্যকর শখগুলো পুনর্জীবিত করা।
• মনে রাখব, ভারসাম্যপূর্ণ জীবন মানসিক চাপের মাত্রাকে হ্রাস করে।
সত্যিকার অর্থে নিজেকে ভালো রাখার ক্ষমতা কেবল নিজের কাছে। অথচ এটা আমরা অনেকেই জানি না বা এ ব্যাপারে সচেতন নই। নিজের কী প্রয়োজন, সেটা আগে বুঝতে হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কারও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে চাওয়া।
সাইকোথেরাপিস্ট ও কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেড