বন্ধুর সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে সংকোচ, করণীয়

জীবনের প্রয়োজনে দূরত্ব তৈরি হয়মডেল: পমি ও সজীব। ছবি: সুমন ইউসুফ

সময়ের ব্যবধানে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসে। বাল্যকালে যাদের সঙ্গে আমাদের চলাফেরা, খেলাধুলা হয়, একটা সময় আমরা তাদের হারিয়ে ফেলি। জীবনের প্রয়োজনে দূরত্ব তৈরি হয়। বছরের পর বছর চলে যায়, অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয় না। কাজের সূত্রে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, বন্ধুত্ব হয়। পুরোনোকে আমরা ভুলে যাই। দিন যত যাচ্ছে, এই কঠিন বাস্তবতা যেন আরও দৃঢ় হচ্ছে।

মাঝেমধ্যে পুরোনো স্মৃতি ও বন্ধুদের মনে পড়লেও দীর্ঘ যোগাযোগহীনতার কারণে নতুন করে যোগাযোগ করতে সংকোচ অনুভূত হয়। মনে হয়, যোগাযোগ করলে যদি সম্পর্কটা আগের মতো আর না খুঁজে পাই! নতুন একটি গবেষণা বলছে, সংকোচ কাটাতে প্রথমে ফোনকল, টেক্সট মেসেজ অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়। গত ১১ জুলাই ‘জার্নাল অব পারসোনালিটি ও সোশ্যাল সাইকোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, লোকেরা প্রায় তাঁদের বন্ধু অথবা পুরোনো পরিচিতদের কাছ থেকে প্রশংসা শুনলেও সেটা অবমূল্যায়ন করেন।

গবেষণার প্রধান লেখক এবং পিটসবার্গের কাটজ গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনের সহযোগী অধ্যাপক পেগি লিউ বলেন, ‘যদি এমন কেউ থাকেন, যাঁর কাছে যেতে আপনি অস্বস্তি বোধ করছেন, তাঁর সংস্পর্শ হারিয়ে ফেলেছেন, তাহলে আপনার যাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলা উচিত। আর দেখবেন, তাঁরা আপনাকে অনেক বেশি অ্যাপ্রিশিয়েট করছেন, আপনার ধারণার চেয়ে বেশি।’

৫ হাজার ৯০০ জন মানুষের মধ্যে জরিপ চালিয়েছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলেন, যদি লোকজন সত্যিকারভাবে বুঝতে পারতেন যে তাঁদের বন্ধুরা তাঁদের কাছে পৌঁছানোকে কতটা মূল্য দেন! এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের যোগাযোগ বড় প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে, ফোনকল, টেক্সট মেসেজ, ই-মেইল, নোট অথবা ছোট্ট গিফট বিনিময়ের মাধ্যমে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করা যায়। মনোরোগ ও বন্ধুত্ব–বিশেষজ্ঞ মিরিয়াম কিরমায়ার বলেন, ‘এই ছোট্ট বিষয়গুলো বন্ধুদের ভাবতে বাধ্য করে যে আমরা তাদের কতটা মূল্যায়ন করি। পাশাপাশি সম্পর্কগুলো আরও মজবুত হয় ও দীর্ঘ সময় টেকে।’

যদি আমাকে চিনতে না পারে, এমন মনোভাব

‘বন্ধুত্বকে লালন করতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যু আমাদের সেটি করতে বিরত রাখে,’ বলেছেন সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক আনা আকবারি। তিনি আরও বলেন, ‘অন্যতম ভয় হচ্ছে, যদি বন্ধুটি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে! আর এই প্রত্যাখ্যান ভুলে যাওয়া অসম্ভব। সুতরাং এটাকে কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়, তা আমাদের শিখতে হবে।’

যোগাযোগের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা

মনোবিজ্ঞানী ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক মারিসা ফ্রাঙ্কো বলেন, যাঁরা পুরোনো বন্ধুদের টেক্সট অথবা ফোনকল দিতে সংকোচ বোধ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে যোগাযোগ শুরু করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে কমেন্ট করা ভালো পদক্ষেপ হতে পারে।

তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক মাধ্যম নয়। টেক্সট ও ই-মেইলও একই রকম। আনা আকবারি বলেন, ‘বন্ধুদের ফোনকল দেওয়া যেতে পারে। হয়তো এতে কিছুটা সংকোচ থাকবে, তবু সম্পর্কটা সত্যিকার মনে হবে। যখন আমরা ফোনকলে থাকি, তখন একে অপরের কথা শুনি বা দেখতে পাই, কথোপকথন হয়। একজন বললে, অপরজন জবাব দিতে পারে। এখানে চিন্তার কোনো সুযোগ নেই।’