বিধাতার সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে বিশাল রহস্য আর অদ্ভুত চমক। আকাশ, বাতাস, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র এমনকি পানিতেও সে চমক পরিলক্ষিত হয়। পানি বর্ণহীন, তা আমাদের অজানা নয়। অথচ বর্ণহীন হওয়া সত্ত্বেও সমুদ্রের পানি নীল দেখায়। আবার সেই পানি নদীতে পড়লে নীল হারিয়ে যায়। সমুদ্র থেকে পানি কোনো ছোট পাত্রে ওঠালেও তা বর্ণহীন লাগে। যেন কোনো ম্যাজিক! তবে বহু আগে সেই ম্যাজিকের সমাধান দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সূর্যের আলো সাত রঙের আলোর সমষ্টি। এই সাত রঙের সাতটি তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে। সাতটি তরঙ্গদৈর্ঘ্য কিন্তু সমান নয়। বিজ্ঞানের সাফল্যে আমাদের অজানা নয় যে এই সাত রঙের মধ্যে লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যেমন সবচেয়ে বেশি, তেমনি নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম। সূর্যের আলো কোনো বস্তুর ওপর পড়লে আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে আমরা বস্তুটি দেখতে পাই। সে ক্ষেত্রে বস্তুটি সূর্যের সব আলো শোষণ করে নিলেও যে রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পৌঁছায়, আমরা সেই রং দেখতে পাই। এ সূত্র মতে, সমুদ্রের পানি অতি স্বচ্ছ বলে তা সূর্যের সব বর্ণের আলো শোষণ করে। তবে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নীল বর্ণের আলো খুব বেশি শোষণ করতে পারে না। ফলে তার কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ফিরে আসে। এ জন্য আমরা সমুদ্রের রং নীল দেখতে পাই। আবার যেহেতু কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট আলোর বিক্ষেপণ বেশি, তাই তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নীল আলো সমুদ্রের পানির সঙ্গে বিক্ষেপিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে যায়। এ কারণে সমুদ্রের পানি নীল দেখায়।
ওই একই পানি নদীতে পৌঁছালে নীলের বিলুপ্তি ঘটে। এ ক্ষেত্রে আলোর এ প্রতিফলনের হার পানির পরিমাণ বা উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। নদীর গভীরতা সমুদ্রের চেয়ে কম হওয়ায় পানির পরিমাণ কম। তাই নীল বর্ণের প্রতিফলনও সমুদ্রের চেয়ে কম। অন্যদিকে এক পাত্র বা এক গ্লাস পানিকে কখনোই নীল দেখা যাবে না। কম পানি থেকে প্রতিফলিত নীল আলোর পরিমাণ এতই কম যে তা আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। উপরন্তু সাগরের পানি স্বচ্ছ ও গভীর হওয়ার কারণে এটি সূর্যের প্রায় সব আলো শোষণ করতে পারে। কেননা যেকোনো স্বচ্ছ বস্তুর আলো শোষণের ক্ষমতা বেশি। আর নদীর পানি অস্বচ্ছ ও ঘোলা বলে সমুদ্রের তুলনায় কম আলো শোষণ করে। তাই নীলের প্রতিফলনও সাগরের তুলনায় কম। এ কারণে আমরা নীল আলোর প্রতিফলন নদীর পানিতে ততটা দেখতে পাই না।
একইভাবে বিশাল সাগরের বিরাট জলরাশিতে যে পরিমাণ নীল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে, তা নদীর কম পানিতে ঘটে না। নদীর পানির তুলনায় নীল আলোর বিচ্ছুরণ সমুদ্রের পানিতে বেশি হয়। তাই নদীর তুলনায় সমুদ্রের পানিতে নীলের আধিক্য আমাদের দৃষ্টিতে বেশি ধরা পড়ে। বাস্তবিকভাবে সমুদ্রের পানি নীল বলে মনে হয়। সে জন্য বিশাল সমুদ্রে নীলের এই সমারোহ দেখে সমুদ্রবিলাসীদের মন হারিয়ে যায় নীলের সাম্রাজ্যে।
দক্ষিণ মুগদাপাড়া, ঢাকা