আমার সুপারহিরো
বাবার রাজ্যে আমি রাজকন্যা। তিনি আমার অক্সিজেন, পথচলার সাহস, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাদুকর। আমার না বলা কথাগুলো কীভাবে যেন বুঝে ফেলেন। তাঁর কাঁধে মাথা রাখলে পৃথিবীর সব মন খারাপেরা মুহূর্তেই ছুটি নেয়। তবে বাবার এত এত ভালো গুণের মধ্যেও বিশেষ একটি খারাপ দিক হলো—তিনি মিথ্যাবাদী!
আমি দূরে থাকি, আমার টেনশন হবে—এই ভেবে তীব্র অসুস্থতা নিয়েও দিব্যি বলে যাবেন, ‘ভালো আছি।’ কখনো জানান না তাঁর অসুস্থতার কথা। একদিন বাবার মাথা ফেটে যায়। হাসপাতালে নিয়ে সেলাই দেওয়া হচ্ছিল। ফোন দিয়ে বললাম, ‘ভালো তো বাসো না আমায়। আমি তো তোমার কেউ না! একটা ফোনও দাওনি আজ সারা দিন। সব ভালোবাসা আপুকেই দাও।’
বাবা আমার কথা শুনে হাসছিলেন। এত স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন যে বুঝতেই পারিনি চিকিৎসক তখন বাবার মাথা সেলাই করছিলেন। এই হচ্ছে আমার বাবা। নিজে হাজার কষ্টে থাকলেও আমাদের বুঝতে দেবেন না।
বাবা আমার কথা শুনে হাসছিলেন। এত স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন যে বুঝতেই পারিনি চিকিৎসক তখন বাবার মাথা সেলাই করছিলেন। এই হচ্ছে আমার বাবা। নিজে হাজার কষ্টে থাকলেও আমাদের বুঝতে দেবেন না।
আমার কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি আসতে সময় লাগে সাত ঘণ্টা। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে অন্তত ৭০ বার কল দেওয়া মানুষটা আমার বাবা। আমি রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সারা রাত মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেওয়া মানুষটা তিনি। গায়ে জ্বর নিয়ে মাঝরাতে আইসক্রিম কিনে আমার পাগলামির আবদার পূরণ করার মানুষটা বাবা। আম্মুর শাসনের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো মানুষটা বাবা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব বদলায়। শুধু বদলায় না বাবা নামের মানুষটি। ওনার কাছে আমি এখনো তাঁর ছোট্ট পরি। আজও রাস্তা পার হতে গেলে হাত ধরে রাখেন। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে বড় হয়ে গেছি, কখন যে বাবার মেয়ে থেকে মা হয়ে উঠলাম, বুঝতেই পারিনি। মায়েদের মতোই ঠিক সময় ওষুধ না খেলে বকাঝকা করি, শাসন করি।
সারা জীবন বটবৃক্ষ হয়ে পাশে থেকো আমার সুপারহিরো। ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে, বাবা।