বন্ধুত্বে অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই
লেখাটি ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ‘তারুণ্য’ ম্যাগাজিনের দশম সংখ্যা থেকে নেওয়া।
যে স্বপ্ন নিয়ে দুই বছরের জন্য বন্ধুসভায় কাজ শুরু করেছিলাম, শেষ সময় এসে মনে হলো কত কাজ বাকি, অথচ শুরুতে মনে হয়েছিল অনেক কিছু করে ফেলব। বলা হয়ে থাকে, দুই ক্ষেত্রেই সময় খুব দ্রুত অতিবাহিত হয়—প্রথমত আনন্দ করার ক্ষেত্রে এবং দ্বিতীয়ত কাজ করার ক্ষেত্রে। দিন শেষে আমি উপলদ্ধি করেছি আমরা নই; বরং সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্ধুরাই বন্ধুসভার প্রাণ। সারা দেশের বন্ধুরাই এই সংগঠনকে উজ্জ্বল করে তুলেছেন। আমরা শুধু সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলেছি। আমাদের সবার কাজ এবং দিন শেষে আমাদের সবার আনন্দই আমাদের এক সূত্রে বেঁধে রেখেছে।
একজন বন্ধু তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় গাছ লাগানোর কাজে ব্যয় করছেন। কেউ কেউ একটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে নিজেদের সঞ্চয় ভেঙে পরিবারটির জন্য দোকান করে দিচ্ছেন।
সবার মতো আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনি কাজকে আপনার সর্বোচ্চটা বিলিয়ে দিন, কাজ একদিন সত্যি সত্যি আপনাকে আপনার প্রাপ্য ফিরিয়ে দেবে। আমরা দেখছি একজন বন্ধু তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় গাছ লাগানোর কাজে ব্যয় করছেন। কেউ কেউ একটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে নিজেদের সঞ্চয় ভেঙে পরিবারটির জন্য দোকান করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজের জন্য শীতের কম্বল না রেখে গরিব মানুষদের বিলিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ পথচারীদের জন্য নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো বানিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজের অর্থে শহীদ মিনার বানিয়ে দিচ্ছেন। সারা দেশের বন্ধুরা নিজের আনন্দের দিকে না তাকিয়ে গরিব মানুষদের সহমর্মিতায় ঈদের অংশ হিসেবে ঈদের উপহারসামগ্রী ও নগদ অর্থ দিচ্ছেন। বর্ষার শুরুতে সারা দেশে গাছ লাগানো কর্মসূচি সফল করে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন রুখতে কাজ করে যাচ্ছে। গত বছরের সিলেট অঞ্চলের বন্যায় সারা দেশের বন্ধুরা যেভাবে সহায়তা করেছে, সেটি আরও একবার আমাদের সিডরের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, যেখানে বন্ধুসভার বন্ধুরা দক্ষিণাঞ্চলে সিডরে আক্রান্ত এলাকায় থেকে তাঁদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সিলেটের বন্যায় আমাদের বন্ধুরা সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সারা দেশ থেকে অর্থসহায়তা নিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সারা দেশের ও বিশ্বের লক্ষাধিক বন্ধু যে অভাবনীয় জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন, তা লিখে শেষ করা যাবে না। বন্ধুদের ছোট ছোট কাজ দেশের পরিবর্তনে অভূতপূর্ব অবদান রাখছে।
সারা দেশে একটি মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে, একটি পাঠকশ্রেণি ও সৃজনশীল লেখকশ্রেণি তৈরিতে প্রথম আলো যেভাবে সহযোগিতা করছে, তা আমাদের বন্ধুদের আগামী সময়ের জন্য শুধু একজন সমাজকর্মী নয়; বরং মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে নিজেকে প্রস্তুত করছে। সারা দেশের স্কুলগুলো নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও স্কুলগুলোতে নিয়মিত বিতর্ক কর্মশালাসহ নানামুখী দক্ষতামূলক কর্মশালার মাধ্যমে বন্ধুদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করছেন। বন্ধুসভার মাধ্যমে আমরা শিখছি, ভোগবাদী এই সমাজে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই জীবন নয়; বরং অন্যের জন্য কিছু করতে পারাতেই জীবনের আনন্দ।
বন্ধুদের জন্য একটা সুন্দর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই । অন্যদের মতো আমি বিশ্বাস করেছি, কাজ করতে হবে নিজের স্বার্থ ছাড়া জনকল্যাণ্যের উদ্দেশ্যে শুধু, সম্মান অর্জনের জন্য। সারা দেশের যেখানেই যাই, বন্ধুসভার কাজের সম্মান ও স্বীকৃতি শুনতে পাই। বন্ধুসভার এই সম্মান অর্জনে অগ্রজ যাঁরা কাজ করেছেন ও বর্তমানে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সবার শ্রমকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। আগামী দিনে যাঁরা আসবেন, তাঁরাও বন্ধুসভাকে আগের চেয়েও ভালোভাবে এগিয়ে নেবেন।
বরাবরের মতো আবারও লিখতে চাই, দিন শেষে আমাদের গল্পগুলো শুধুই বন্ধুত্বের, যেখানে অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই। দিন শেষে আমরা এক ও অভিন্ন। দেশপ্রেমে নিবেদিতপ্রাণ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িকতার সংকল্প আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমাদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। বন্ধু মানেই জীবন। এই গভীরতম সুন্দর জীবনে এগিয়ে যাওয়াতে বন্ধুসভা আমাদের সব বন্ধুর হৃদয়ে প্রেরণা হয়েই থাকুক।
সভাপতি (২০২২-২৩), বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ