‘থালা-বাটি কম্বল
জেলখানার সম্বল’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে কারাগারে। কারাগারে বসে বসে তিনি লিখে গিয়েছেন জীবনের কঠিনতম এই অধ্যায়ের কথকতা! সেই লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলা একাডেমির উদ্যোগেই এই মহান কাজটির সূচনা হয়। তারপর প্রকাশিত হলো ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি। লিখেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু! স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন গণ মানুষের দাবি আদায়ে সোচ্চার। এই দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘ঐতিহাসিক ছয় দফা’। ১৯৬৬ সালের এই দাবির জন্য জাতির জনককে করতে হয়েছিল কারাবরণ। কারাবন্দী থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার কথায় তিনি রচনা করেন এই অমর কীর্তি। বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ প্রতিটি পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে।
‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটিতে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের কষ্টের কথা উল্লেখ রয়েছে। জেলখানায় তাঁর জীবন কেমন কেটেছে, জেলখানার মানুষের গল্প, জেলখানায় বসে থেকে দেশের জন্য তাঁর ভাবনা, সেই সংকটপূর্ণ সময়ে মানসিক অবস্থা; বিশেষত কারাগারের জগৎ কেমন ছিল—এ সবকিছু উঠে এসেছে বইটিতে। জেলে বসে তিনি কষ্ট পেতেন। তবে সেটা নিজের কথা ভেবে নয়, বরং দেশ ও দলীয় নেতা–কর্মীদের কথা ভেবে।
এই বইয়ে কারাগারের চিত্রের পাশাপাশি ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের একনায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা, একজন বন্দী বাবার আকুতি, অবুঝ সন্তানের ভালোবাসা, দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শন।
বইটির এক পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—‘চিন্তা করিও না। জীবনের বহু ঈদ এই কারাগারে আমাকে কাটাতে হয়েছে। আরও কত হবে ঠিক নেই! তবে কোনো আঘাতই আমাকে বাঁকাতে পারবে না। খোদা সহায় আছে।’ এটি ছিল ঈদের সময় বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি।
ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন—‘বাংলার মানুষ যে স্বাধীন হবে, এ আত্মবিশ্বাস বারবার তাঁর (বঙ্গবন্ধু) লেখায় ফুটে উঠেছে। এত আত্মপ্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো নেতা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন কি না আমি জানি না।’ তিনি আরও লিখেছেন—‘তাঁর (বঙ্গবন্ধু) জীবনের এত কষ্ট ও ত্যাগের ফসল আজ স্বাধীন বাংলাদেশ। এ ডায়েরি পড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার উৎস খুঁজে পাবে। আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধে আব্বা লিখতে শুরু করেন। যতবার জেলে গেছেন আমার মা খাতা কিনে জেলে পৌঁছে দিতেন। আবার যখন মুক্তি পেতেন, তখন খাতাগুলো সংগ্রহ করে নিজে সযত্নে রেখে দিতেন। তাঁর এই দূরদর্শিতা যদি না থাকত, তাহলে এই মূল্যবান লেখা আমরা জাতির কাছে তুলে দিতে পারতাম না।’
আসলেই তো! এমন একটি বই খুঁজে পাওয়া অনেক দুষ্কর! এই আত্মজীবনীমূলক ডায়েরিটি বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও জাতির পিতার কথা মনে করিয়ে দেবে। বঙ্গবন্ধু ছাড়া এই দেশ কখনোই স্বাধীন হতো না— এ বার্তাটির যথার্থতা আপনি বুঝে যাবেন বইটি পড়ার মধ্য দিয়ে।
একনজরে
বই: কারাগারের রোজনামচা
লেখক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশক: বাংলা একাডেমি
প্রকাশকাল: ১৭ মার্চ, ২০১৭
মুদ্রণ ও অলংকার: ওয়ান স্টপ প্রিন্টশপ
পৃষ্ঠা: ৩৩২
মূল্য: ৪০০ টাকা
সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা