তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায়

চিঠিছবি: ফ্রিপিক

প্রিয় জয়িতা,

কেমন আছ? হয়তো ভালোই আছ। তবু খুব জানতে ইচ্ছা করে তোমার মনের খবর। একাকিত্ব যখন তোমার স্মৃতিগুলো নিয়ে আমার মস্তিষ্কে তীব্রভাবে আঘাত করে, তখন তোমাকে ভুলে থাকা খুব কষ্ট হয়।

অনেক দিন হয়ে গেল তোমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। ইদানীং তোমাকে খুব বেশি মনে পড়ে। অবশ্য এখন মনে পড়লেই–বা কী, তোমায় কল দিতে পারি না, মেসেজ করতে পারি না। এ যন্ত্রণা যে কতটা কষ্টের, তা জানলে হয়তো আমাদের বিচ্ছেদটা হতো না। জানি, তুমিও কষ্ট পাচ্ছ, কিন্তু প্রকাশ করছ না। দুজনে মানিয়ে নিতে পারলে হয়তো আমাদের সুন্দর সম্পর্কটা টিকে থাকত। অন্তত বন্ধু হয়েই না হয় আমরা কাটিয়ে দিতাম আমৃত্যু।

যোগাযোগ না করতে পারার যে কষ্ট আর কথা বলতে না পারার যে বুকের ব্যথা, তা তোমায় বোঝাব কীভাবে বলো! ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তোমার আইডি খুঁজলাম, পেলাম না। হোয়াটসঅ্যাপেও তোমার নম্বরটা ডিলেট করে ফেলেছিলাম, এমনকি কলস্টোরি থেকেও। কোথাও লিখেও রাখিনি। দুজনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কোনো দিন কেউ কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ করব না। এতটা কঠিন আর শক্ত না হলেও পারতাম আমরা। এখন যে আর পারছি না, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। শুধু নিজের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমরা সুন্দর একটা সম্পর্কের আত্মহত্যা করলাম।

তোমার শিক্ষকতা জীবন নিশ্চয়ই ভালো যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই সেটা উপভোগ করছ। স্নাতকোত্তর শেষ করে ক্যাডেট কলেজে পড়ানো অবস্থায় কড়া রুটিনের মধ্যে থেকে মাঝেমধ্যে যে হা-হুতাশ করতে, এখন নিশ্চয়ই তার চেয়ে ভালো আছ। অর্থনীতির শিক্ষক হয়ে তুমি নিজের স্বপ্নের পথে আরও অগ্রসর হও, এই দোয়া করি সব সময়।

তোমার মা নিশ্চয়ই ভালো আছেন। আন্টিকে আমার প্রণাম জানিও। এখনো কি তোমাকে উনি সন্দেহ করেন? বাড়িতে গেলে কতবার লুকিয়ে লুকিয়ে তুমি কথা বলেছিলে, আমার এখনো মনে পড়ে। সারা দিনের অপেক্ষার হয়তো একবার কথা হতো কয়েক মিনিটের জন্য। জানো জয়িতা, এখনো আমি নিজেকে গোছাতে পারিনি, যেটা নিয়ে তুমি প্রায়ই রাগারাগি করতে। আমি আসলে এমনই। ছেলেরা স্বভাবতই নাকি একটু অগোছাল হয়।

আমাদের প্রথম আর শেষ দেখা সেই একবারই হয়েছিল। মনে আছে জয়িতা, ব্যস্ত মেইন রোড পার হয়ে ভাঙা রাস্তা দিয়ে হেঁটে আমরা বিলের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে বসেছিলাম। রৌদ্রে উত্তপ্ত মধ্যদুপুরেও আমাদের আনন্দের কমতি ছিল না। যদিও তুমি সেদিন অবাক হয়েছিলে, তবু আমায় দেখে খুশি হয়ে যে হাসিটা দিয়েছিলে, হাসিমাখা মুখটা এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। সেই হাসিমাখা মুখের চাহনিটা মনে পড়লে এখনো আমার মন ভালো হয়ে যায়। অথচ আমরা এখন দুজন কত দূরে। স্থানের দূরত্ব থেকে মনের দূরত্ব বহুগুণ বেশি। এই কোটি মাইলের মনের দূরত্ব, কোনো দিনও কি মেটানো সম্ভব? একবার কি আমরা শেষ চেষ্টা করতে পারি না?

মাস ছয়েকের সম্পর্ক হলেও আমাদের প্রতিটি দিন সুন্দর ছিল। আবেগঘন কিংবা অপরিণত বয়সের প্রেমের চেয়ে পরিণত বয়সের বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের সম্পর্ক ভালো ছিল। বয়সে উভয়েই যেমন পরিণত ছিলাম, তেমনি কথাবার্তা গোছানো ছিল। সবচেয়ে ভালো দিক ছিল কেউ কাউকে সন্দেহ করতাম না। কোনো একটা বিষয় জটিল মনে হলে, তা নিয়ে আলোচনা করতাম, যাতে আমাদের মধ্যে ঝামেলা না হয়। অথচ দেখো, খুব সামান্য একটা বিষয়ে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।

তোমার শিক্ষকতা জীবন সুন্দর হোক। অর্থনীতির সব বিষয়ে অভিজ্ঞ হও। আর পারলে একবার আমাদের মনের অর্থনীতির বিষয়টা দেখবে। দেখো সমাধান করতে পারো কি না। অর্থনীতির চাহিদা, জোগান আর বাজার ভারসাম্যের মতো আমিও তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকব। ভালো থেকো জয়িতা।

ইতি
তোমার হৃদয়

হাজীপুর, নরসিংদী