মেয়ে থেকে মা
একটা মেয়ের মা হওয়ার পথটা জীবনের সবচেয়ে কঠিন। মা–বাবার আদরের মেয়ে সংসারের অসমতল রাস্তা পার হতে না হতেই, মা হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ ১০ মাস কত ধরনের শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপে মেয়েটা দিন কাটান। নানা অসুখেও ওষুধ খাওয়া বারণ। মানসিক চাপ কেউ বুঝতে পারেন না। একটা জীবন পাল্টে যেতে থাকে। সবাইকে ছাড়তে হয় জীবনের স্বাভাবিক ব্যাপারগুলো। ঘরমুখো হয়ে থাকতে হয়। শারীরিক কারণে অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়।
সৌন্দর্য নাকি মেয়েদের সবচেয়ে প্রিয় দিক। একটা মেয়েকে তাঁর সন্তানের কথা ভেবে সৌন্দর্য ধরে রাখার চিন্তা বাদ দিতে হয়। কারণটা কেউ মনে রাখেন না। যে মেয়ে এত সুন্দর ছিলেন, তিনি এখন মোটা। মানুষ আর আগের মতো তাঁকে সুন্দর ভাবেন না। অনেক সময় সবচেয়ে কাছের মানুষটাও কত কিছু বলে বসেন। অথচ সেই মেয়ে সবকিছু উৎসর্গ করে সবাইকে একটা নতুন জীবন এনে দেন।
অনেক মেয়ের স্বপ্ন থাকে নিজের জন্য কিছু করার। অনেকে চাকরি করেন। অনেক সময় তা–ও ছাড়তে হয়। অবশ্য ভবিষ্যতে সেই মেয়েকেই শুনতে হয়, তাঁর পায়ের নিচে মাটি নেই। সারা দিন ছুটি ছাড়া চাকরি। দম নেই বিশ্রামের।
মা মানেই মমতাময়ী। সেটা তো এমনি এমনি নয়। অসুস্থ সন্তানকে বুকে আগলে রাখেন মা। কাঁদলে মায়ায় জড়িয়ে রাখেন। নিজের কষ্ট লুকিয়ে সন্তানের মুখে হাসি ফোটান। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাইয়ে পেট ভরান। নিজের কাপড় পুরোনো হলেও সন্তানের জন্য নতুন কাপড় চাই। সন্তানদের সব আবদার মাথার ওপর রাখেন। নিজের শরীর যেন পাথরে গড়া। কোনো অসুখ–বিসুখ যেন তাঁর গায়ে লাগতে নেই। সব কষ্ট তুচ্ছ করে খাটতে হয় রাত–দিন।
সারা জীবন মায়ের সম্বল বলতে কেবল সন্তানদের ভালো থাকা, সন্তানের সাফল্যের সুখ। তবু সন্তানের নাম লেখা থাকে বাবার নামের সঙ্গে। মা যেন শুধু কর্মের খাতায়।
যে মা জীবন পার করেন শুধু সন্তানের দিকে তাকিয়ে, যাঁকে সন্তানেরা ছোটবেলায় জড়িয়ে রাখে, আঁকড়ে ধরে মায়ের আঁচল, সেভাবেই যেন তাঁকে আঁকড়ে রাখে দিন শেষেও। মা যখন একলা হয়ে যান, যেন অসহায় না হয়ে পড়েন।
আমরা যারা আজও ‘মা’ ডাকতে পারি, তারা সত্যিকারের ভাগ্যবান। আর যাঁদের নেই, তাঁরাও মায়ের দোয়া পান ওপার থেকে। যেখানেই আছেন, মায়েরা ভালো থাকুন।
আগারগাঁও, ঢাকা