আমার বেকার বাবা

আমার বেকার বাবাছবি: সংগৃহীত

‘স্যার, ঘরে আছেননি?, মামা, ঘরে আছেননি?, ভাই, ঘরে আছেননি?’—ছোটবেলায় ভোরের আলো ফুটতেই এসব খবরের উত্তর দেওয়ার জন্য আম্মু ঘুম থেকে জাগিয়ে দিত। চোখ কচলে বলতাম, ‘না, মসজিদে।’

আব্বু মসজিদ থেকে ফিরতেই এলাকার মানুষ বিভিন্ন কাজ ও পরামর্শের জন্য, আর শিক্ষার্থীরা হাজির হতো পড়ার জন্য। আব্বু ছিলেন একটি বেসরকারি স্কুলের গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক। তখন প্রচুর প্রাইভেট পড়াতেন। পরে অবশ্য ছেড়ে দেন সব। সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতেন। যুক্তি-পরামর্শর জন্য এলাকার মানুষ ছুটে আসতেন।

আব্বু একটা অঙ্ককে অনেকভাবে বুঝিয়ে দিতেন। আজও কোনো অঙ্ক না পারলে তাঁর শরণাপন্ন হই। শুনেছিলাম, স্বাধীনতার আগে বাবা সিক্স-সেভেনে থাকতেই তাঁর থেকে ওপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। গণিত- ইংরেজিতে ভালো ছিলেন। নিজের ক্লাসেরগুলো শেষ করে বড় ক্লাসের বইগুলো পড়ে ফেলতেন।

আমার কর্মব্যস্ত বাবা এখন বেকার। ২০১১ সালে অবসর নিয়েও অনেক বছর স্কুলে অতিথি শিক্ষক হিসেবে পড়িয়েছেন। পাঁচ বছর আগে ৪৬ বছরের চাকরিজীবন থেকে বিদায় নেন। এখন আর সকালে নাশতার সময় তাঁর তাড়াহুড়া নেই। নেই বারবার ঘড়ি দেখার বাহানা।

এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক ছিলেন বলে হয়নি কোনো পদোন্নতি। পাননি সরকারি চাকরীজীবীদের মতো পেনশন। অবসরের টাকা দিয়ে বাড়ি করার স্বপ্নও বেসরকারি শিক্ষক বাবা লালন করেননি। ব্যাংক বানিয়েছেন সন্তানদের। ব্যাংক বানিয়েছেন শ্রদ্ধা আর সম্মানকে। এ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাই এ দেশের হাজারো এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পাথেয়। আমিও বাবার অনুসারী। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক। ভালোবাসি বাবা!

সহকারী অধ্যাপক, খিলবাইছা রাহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, লক্ষ্মীপুর