বাংলার সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের

ভৈরবসভার বন্ধুরা মিলে ‘কঞ্জুস’ ও ‘কনডেম সেল’ নামের দুটি মঞ্চনাটক উপভোগ করেন
ছবি: বন্ধুসভা

অতীতের কথা থেকে জানা যায়, সাহিত্য ও নাট্যচর্চা তখনকার সময়ে ছিল উচ্চমার্গীয়। অর্থাৎ সমাজের প্রগতিশীল মানুষেরাই কেবল সাহিত্য ও নাট্যচর্চা করত। সে সময়ে দৈনন্দিন জীবনে মঞ্চ নাটকই ছিল বিনোদনের অন্যতম বড় মাধ্যম। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমন মোল্লা বলেন, মঞ্চনাটক হলো সাহিত্যের অনন্য একটি ধারা। এটি মেধার বিকাশ ঘটায়, চেতনার জায়গা প্রসারিত করে, সবার একবার হলেও মঞ্চ নাটক দেখা উচিত।

এবার ভৈরব বইমেলা পরিষদের রজতজয়ন্তী আয়োজনে বন্ধুসভার বন্ধুরা মিলে ‘কঞ্জুস’ ও ‘কনডেম সেল’ নামের দুটি মঞ্চনাটক উপভোগ করেছি। ৬ জানুয়ারি প্রথম দিনের পরিবেশনায় ছিল ‘কঞ্জুস’। এটি ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’–এর বাংলা রূপান্তর, করেছেন তারিক আনাম খান। বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটকও এটি। আমরা দেখলাম ৭৬৮তম মঞ্চায়ন। নাটকটি ঢাকার বাসিন্দাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে রূপান্তরিত, যাঁরা উর্দু ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে এক বিশেষ ধারায় কথা বলেন। তাঁদের জীবনধারার আবহ তৈরি করার জন্য নাটকটিতে পুরোনো দিনের জনপ্রিয় সব হিন্দি গান ব্যবহৃত হয়েছে। পুরান ঢাকার কৃপণ হায়দার আলী খানের সংসারের নানা ঘটনা নিয়ে এগিয়েছে কাহিনি। প্রতিটি দৃশ্য ছিল উপভোগ্য। হাস্যরস সংলাপ আর দারুণ অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে মঞ্চনাটকটি।

‘কনডেম সেল’ নাটকের একটি দৃশ্য
ছবি: বন্ধুসভা

ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, মঞ্চনাটকের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ভৈরব বইমেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রতিবছর মঞ্চনাটক দেখার সুযোগ হয়। তবে এবারের পরিবেশনাগুলো ব্যতিক্রম।

দ্বিতীয় দিনের পরিবেশনায় ছিল ‘কনডেম সেল’। রচনা করেন অনন্ত হীরা ও নির্দেশনা দেন আওয়াল রেজা। নাটকটিতে ওঠে এসেছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের আগে, যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর অত্যাচার ও তাদের সহযোগী এদেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর নির্মম অবিচারের ঘটনা। গণহত্যা, লুটপাট, নারী ধর্ষণের নির্মমতার বিষক্রিয়ায় নীল হয়ে যাওয়া ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ৬৮ হাজার গ্রামের দৃশ্যপট। ’৭১-এর সেই দিনগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। প্রতিটি সংলাপ, দৃশ্যে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে মিলনায়তনজুড়ে, শেষ দৃশ্যে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি আমরা।

আধুনিক সভ্যতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সেই সঙ্গে ভুলতে বসেছি আমাদের ঐতিহ্যকে। আমাদের সাহিত্যের অনেক ধারার সঙ্গেই বর্তমান প্রজন্ম পরিচিত নই। বাংলার সংস্কৃতিগুলো বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। এই দুটি মঞ্চনাটক সাহিত্যের মনের খোরাক কিছুটা হলেও পূরণ করেছে, আমাদের পরিচয় করিয়েছে ইতিহাসের সঙ্গে।

সাধারণ সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা