৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজশাহী-৬২০৫
নীলাঞ্জয়ী,
আমি এখন তেইশের কোঠায় দাঁড়ানো ঊনবিংশ শতাব্দীর এক অপরিপক্ব প্রেমিক। আমার দেহের গহিনে রক্ত-মাংস, শিরা-উপশিরার বাইরেও যে অস্পৃশ্য অবিনশ্বর রুহ আছে, তা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম। যে রুহের জগৎ থেকেই তোমাকে ভালোবাসি। এ পৃথিবীতে আসার পর থেকেই আমি ভীষণ তৃষ্ণার্ত। মন বলে তোমায় বহু যুগ দেখি না। শুধু তোমাকে একবার দেখার নেশায় আমার চোখের জল শুকিয়েছে। দুই চোখের সরু রেখায় তৈরি হয়েছে এক দীর্ঘ মরুপথ। বলতে পারো তোমাকে দেখার অসুখ আমাকে পেয়ে বসেছে। কী ভাবছ হঠাৎ ভাঙা শব্দে তোমাকে চিঠি লিখছি কেন? এ কেবলই তোমার স্মৃতির রোমন্থন।
প্রবল অবহেলার পরও একটি মানুষকে এতটা বিশ্বাস করা যায়, তোমার সঙ্গে দেখা না হলে আমার তা জানাই হতো না। উপলব্ধি করা হতো না, তোমাকে স্পর্শ না করেও আমি উন্মাদের মতো ভালোবাসতে পারি। আমি তোমায় প্রবলভাবে কল্পনা করতে পারি। যখন তুমি কিশোরী, গ্রামের দস্যি মেয়েদের সঙ্গে খেলা করতে। ধানসিঁড়ি পেরিয়ে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে অজানায় হারাতে। তখন আমার কিশোর মনটাও তোমার সঙ্গে ছুটে বেড়াত দিগ্বিদিক। ঝুলে থাকত তোমার মনের দেয়ালে। এখন তুমি পরিপূর্ণ যুবতী। তোমার যৌবন এসেছে। তোমার চোখ হয়েছে চিলের মতো তীক্ষ্ণ। যে চোখের বাঁকা চলন নীড়ে ফেরার গল্প বলে। যে গল্পে আমি খড়কুটোর ছাউনি হতে চেয়েছি।
তোমার মুখখানি অর্ধচাঁদ থেকে পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদে রূপান্তরিত হয়েছে। তোমার শরীরে এসেছে সমুদ্রের ঢেউ। তবু তোমাকে নিয়ে কল্পনার অবসান ঘটেনি। আজও দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে। অন্ধকারে ছেয়ে যায় চারদিক। সময় বয়ে চলে গভীর থেকে গভীরে। শিয়াল-কুকুরগুলো ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়ে। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ আসে। আকাশে জমে মেঘ। ঝিরিঝিরি নামে বৃষ্টি। গাছের ডালে ডালে ফুটে স্নিগ্ধ কদম। তখনো আমি নিশিবকের মতো জেগে থাকি তোমার অপেক্ষায়। যদি তুমি একবার আসো অভিমান ভুলে! কড়া নাড়ো আমার চিলেকোঠার কপাটে। এ আশাতেই বুক বেঁধেছি বারবার। তবু তুমি একবার আসোনি! আমাকে শান্ত করতে, আমাকে পূর্ণ করতে।
তুমি নিশ্চয়ই অনেক ভালো আছ? আকাশের বুকে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে! আমিও তা–ই চাই। তুমি সুখী হও। তুমি স্বস্তি পাও। তোমার যত দীর্ঘশ্বাস আমাকে ঘিরে ফেলুক। তোমার যত হতাশা আমার হোক।
‘তুমি না হয় মুক্ত হও, আমি হই কারাবন্দী।
তুমি চাইলে অভিমান, আমি চেয়েছি সন্ধি।’
আজ বরং এখানেই শেষ করি অনুভূতির অঙ্কন। রাত পেরিয়ে ভোর নেমেছে প্রায়। দেয়ালঘড়িটায় ঠিক ৪টা ৪২। তোমাকে না দেখার আক্ষেপে কলমের কালি শুকিয়েছে এতক্ষণে। আমিও তাই আজকের মতো বিদায় নিলাম। ভালোবাসা জেনো।
ইতি
নিত্য হিতৈষী
অনির্বাণ