সে সুহাসিনী

অলংকরণ: আরাফাত করিম

সেই একদিন, যেদিন সে হেসেছিল সুন্দর,
আমি দেখিনি, তাকিয়েছিলাম অবাক;
সে হাসিতে প্রাণ ছিল, লাল নীলের রশ্মি,
সবাই দেখেছে শুধুই হাসি, দুঠোঁটের দূরত্ব—পড়েছিলাম হাসি! হয়েছিলাম স্তব্ধ, নির্বাক।

বিজয়ের উচ্ছ্বাসের মতো, জয়ের মতো করে,
এক অনবদ্য চিরন্তন স্নিগ্ধ সত্যের মতো,
ইহজগতে এক বিশাল সত্যের মতো করে—
সোনালি বকুল যেমন হাসে, ফুল ও ঘাসে—
একজন মায়া মানবী কীভাবে এত হাসে?
এ মুগ্ধতার কি রূপ? কি নাম? কি বর্ণ?

বাঁকা দাঁতের পরে, চোখে দেওয়া কাজলে—
তিন তিলে আঁকা মুখে, টোল পড়া গালে—
একদিন হেসেছিল উচ্চ স্বরে, কি হাসি সে—
দূরত্ব যা–ই হোক, দেখেছিলাম অন্তরালে।

হাতে রাখা ডায়েরি, সাদা কাগজের ছড়াছড়ি
দমকা হাওয়ায় চুলেরা এলোমেলো তবু—
ফুলেরা ঠাঁই পেয়েছিল চুলে, সুন্দর বকুলে,
সে সুন্দর নাকি ফুল? হাসি? নাকি চোখ?
মাথাভর্তি চিন্তা আমার তবু প্রেমে ভরা বুক।

প্রশ্নবিদ্ধ মস্তিষ্কে হিসেব কষে না, কষছে না।
দেখেছি হাসি, হয়তো পড়েছি প্রেমে, অসুখে;
হঠাৎই বৃষ্টি, অদ্ভুত! রোদের মাঝে তপ্ত দুপুরে,
কে সে? সে কে? চিনি আমি? নাকি না?
ধ্যাত্তেরি! আমার কি? সে যা–ই হোক!
নীরব নিথর চোখে, কী যেন মায়ায় বদ্ধ—
যে যা–ই বলুক, তখনই লিখেছি কাব্য, গদ্য!
সুন্দর বিকেল নাকি তার মন? এত হাসি!

কথোপকথন, অনর্গল হাসি, অতি সাধারণ—
হাসিও কথা বলে বুঝেছি প্রথম, এ কেমন?
একদিন হেসেছিল, সে উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত—
অতি সাধারণ করে, অসাধারণ ভীষণ আনমনে,
আমার চোখে সে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল হেসে,
ফুলে ও চুলে, গালের তিলে, চোখের নীলে,
এরপর হলো চোখের আড়াল, জনতার ভিড়ে।

আজও হাসে ঐ চত্বর, পদধূলি মাখে এখনো,
অচেনা, অজানা, বেওয়ারিশ সুহাসিনীর ঠিকানা!
সবাই দেখে হাসি, শুনে কলহাস্য; সেখানে;
ফুল ও পাপড়ির মেলবন্ধনে রঙের প্রজাপতি,
ঠোঁটে হাসি, যা স্বর্গীয় সুন্দর যেমন যেখানে!
এরপর আর সত্যিই আসেনি সে এখানে—
হাসেনি কখনো, দেখিনি আর, মেলেনি দেখা;
মেঘ আসে শহরে, ব্যস্ত গাড়ি বাড়ির বহরে,
ফুলেরা হারাচ্ছে প্রাণ, সবাই হচ্ছে নিষ্প্রাণ,
এখানে রোজ আসি, আমি যেন এক ভবঘুরে!

চায়ের আড্ডা হচ্ছে হোক, শীটের বস্তা ভারী—
রাতদিন ব্যস্ততা, এ পাড়ার সব ক্লান্ত—খুব;
কাটছে রাত্তির দ্বিপ্রহর, চোখে ভাসছে হাসিমুখ,
ওই বেঞ্চ, প্যারিস রোড অথবা লাল কমল, নীল—
কী যন্ত্রণা! আবারও মনে সেই হাসি, কালো তিল!
নীল বাসের আসা–যাওয়া, রাত পেরিয়ে ভোর;
আবারও ক্যাম্পাস ভর্তি কলরব, নতুন সব।

নেই কারও মুখে হাসি, যেমন দেখেছিলাম তাকে,
হাসি মিলিয়ে খুঁজব? নাকি চোখ দেখে বুঝব?
সব আছে, সুর নেই, বিমর্ষ সব, নির্জীব উৎসব।
প্রাণ চাই, মুক্তি চাই, হাসি চাই, কান্না নয়!
সবাই হাসুক সেদিনের সুহাসিনীর মতো করে,
নালিশ নয়, কোনো সালিশ নয়, ক্ষয় নয়,
শহর জুড়ে হাসুক সবে, আবারও বাঁচুক তবে,
ফুল হয়ে ঝরুক শান্তি, ভয় নয়, এ হোক অভয়।

সুহাসিনী আসুক, আমাদের পাশে বসুক,
জীবন তরে যত গ্লানি, কাটুক এবার সবার।
সে সুহাসিনী সত্যিই আসুক, তার মতোই হাসুক,
এ অপেক্ষায় আমি আমরা, প্রতিটি প্রেমিক;
প্রেমিকা হয়ে, বৃষ্টি হয়ে আমাকেই ভালোবাসুক।