বর্ষাকালে আমাদের দেশে সাপের আনাগোনা বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপার সাপ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে কাউকে সাপে কামড় দিলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সচেতন হতে হবে।
সাপে কামড় দিলে কী করবেন:
• আক্রান্ত ব্যক্তি যেন ভয় না পান, তাঁকে আশ্বস্ত করবেন। সাহস দেবেন।
• কামড় দেওয়া স্থানটি বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। বেশি নড়াচড়া হলে সাপের বিষ সারা দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
• কামড় দেওয়া স্থানে দড়ি বা ফিতা দিয়ে শক্ত করে গিট দেওয়া যাবে না।
• হাতে কামড় দিলে, যদি আংটি বা চুরি পরা থাকে, এগুলো খুলে ফেলতে হবে। অনেক সময় বিষক্রিয়ার ফলে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়; তখন এই চুরি, আংটির কারণে সেখানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পচন ধরে।
• রোগীর আক্রান্ত স্থানকে অচল করে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা সদর হাসপাতাল অথবা মেডিকেল কলেজে নিতে হবে।
• যদি সাপটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে চিকিৎসা প্রদানে সুবিধা হবে। হাতের কাছে মোবাইল থাকলে সাপের ছবি তুলে রাখতে পারেন। তবে সাপকে মারার চেষ্টা করে সময় নষ্ট করবেন না।
বিষধর সাপ কামড়ের লক্ষণ:
• বিষধর সাপ কামড় দিলে দংশিত স্থানে চামড়ার রং পরিবর্তন হয়ে অনেক সময় কালচে হয়ে যায়।
• অনেক সময় কামড় দেওয়া স্থান থেকে অনবরত রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
• নিদ্রাভাব চলে আসে, চোখের পাতা ভারী হয়ে যায় ও চোখে ঝাপসা দেখা যায়।
• কথা জড়িয়ে যায়, জিহ্বা ভারী হয়ে আসে, ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়।
• ঘাড় ভেঙে আসে।
• প্রসাবের সঙ্গে রক্ত আসে বা প্রসাবের রং কালো হয়ে যায়।
সাপে কামড় দিলে যে কাজগুলো করা যাবে না:
• কামড় দেওয়া স্থানে ব্লেড দিয়ে কাটা যাবে না।
• অ্যাসিড বা অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
• রোগীকে বিষক্রিয়া নষ্ট করার উদ্দেশে কবিরাজের পরামর্শে অহেতুক ঝালের গুঁড়া, কাঁচা মরিচ, লবণ ইত্যাদি খাওয়ানো যাবে না।
• বাংলা সিনেমার নায়কের মতো সাপে কাটা স্থানে চুষে বিষ নামানোর চেষ্টা করা যাবে না।
• কামড় দেওয়া স্থানে শক্ত করে গিট দেওয়া যাবে না। এতে আক্রান্তস্থানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে বিষক্রিয়া আরও পচন ধরে।
• ওঝা, সাপুড়ের কাছে নিয়ে ঝাড়-ফুক করে সময় নষ্ট করা যাবে না।
সাপের কামড় এড়িয়ে চলবেন যেভাবে:
• যেসব স্থানে সাপের উপদ্রব আছে, সেসব স্থানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
• মাঠে কাজ করার সময় গামবুট বা প্লাস্টিকের জুতা পরতে পারেন।
• বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।
• মাটির ঘরে ইঁদুরের গর্ত থাকলে তা বন্ধ করে দিন।
• রাতে বা অন্ধকারে চলচলা করার সময় মাটিতে পা বা লাঠি দিয়ে শব্দ করে চলুন।
মনে রাখবেন আমাদের দেশের সব সাপ বিষধর নয়। সব সাপের কামড়ে অ্যান্টিভেনম লাগে না। তা ছাড়া অ্যান্টিভেনম নিজেও একটি বিষ। নির্বিষ সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়।
বিষধর সাপের কামড়ের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। এটি বাংলাদেশ সরকার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক, দেশের প্রায় সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথেষ্ট সরবরাহ ও মজুদ আছে।
তাই নির্বিষ বা রাসেল ভাইপারের মতো বিষধর সাপই হোক না কেন, যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে আসতে হবে। চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সঠিক ব্যবহার জীবন বাঁচাবে।
সাপ আমাদের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাসেলস ভাইপারসহ সব সাপই ভিতু প্রাণী। নিজে আক্রান্ত না হলে কাউকে কামড় দেয় না। তাই, আতঙ্কিত নয়, সচেতন হোন; নিজে বাঁচুন, সাপকেও বাঁচতে দিন।
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাটমোহর, পাবনা