বাস্তব জীবনের ‘থ্রি ইডিয়টস’

বন্ধুত্বের গল্প ছড়িয়ে যাকছবি: লেখকের সৌজন্যে
র‌্যাঞ্চোর মতো দৌড়াতে থাকা রক্তযোদ্ধাদের দেখেছি। দেখেছি কীভাবে স্বেচ্ছায় একজন আরেকজনের জন্য রক্ত জোগাড় করে। সময়, টাকা ও শ্রম ব্যয় করে কীভাবে অন্যের জন্য রক্ত সংগ্রহ করে।

বলিউডের ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুভির কথা মনে আছে? থাকারই কথা। মুভিটা সবারই পছন্দের। যেখানে দেখানো হয়েছে বন্ধুত্বের সুন্দর বন্ধনের গল্প। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের এই গল্পের সঙ্গে আমাদের প্রায় সবারই স্মৃতি রয়েছে। তেমনি একটি সত্যিকারের গল্প বলব আজ। তবে এই কাহিনিতে ইডিয়ট অনেকজন।

আমার গল্পে ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুভির রাজুর বাবার মতো কাউকে না দেখলেও র‌্যাঞ্চোর মতো দৌড়াতে থাকা রক্তযোদ্ধাদের দেখেছি। দেখেছি কীভাবে স্বেচ্ছায় একজন আরেকজনের জন্য রক্ত জোগাড় করে। সময়, টাকা ও শ্রম ব্যয় করে কীভাবে অন্যের জন্য রক্ত সংগ্রহ করে। ফোনকলের পর ফোনকল দিয়ে কীভাবে একেকজনকে বিরক্ত করে। হাতে ধরে, নিজের গাড়িতে ভরে কিংবা পকেটের টাকা দিয়ে হাসপাতালের বিছানায় নিয়ে যায়। দেখেছি এমাজ, রাশেদ, আরিফ, ইউনুস ও রিয়াদ কীভাবে কাঁপা কাঁপা হাতে কল দেয়, ঘাম মোছে কপালের, অপরিচিত-পরিচিত সবার জন্য লাল লাল ভালোবাসা সংগ্রহ করে।

দেখেছি র‌্যাঞ্চোর মতো কীভাবে বন্ধুদের উৎসাহ দিতে হয়। অর্থ উপার্জনের জন্য বন্ধুকে টিউশন খুঁজে দিতে, কোনটা ভালো হবে, সে বিষয়ে সৎ উপদেশ দিতে। আমি দেখেছি বন্ধুর জন্য বৃষ্টি, তুফান, রোদ, কুয়াশায় অপেক্ষা করতে। রাতের পর রাত আড্ডা দিতে। এই ভেবে যে বন্ধুর মন ভালো হয়ে যাবে সহস্র কষ্ট থাকলেও। দেখেছি বন্ধুর জন্য শিক্ষকের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি করতে, শিক্ষকের হাতে মার খেতে, ক্লাস কিংবা পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কৃত হতে। শুধু বন্ধুর জন্য।

ভালোবাসার জন্য কারাগারেও যেতে দেখেছি। কত অসম্ভব সুন্দর পরিকল্পনা করে ঠিক যেভাবে ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুভিতে প্রিয়াকে (কারিনা) বিয়ের আসর থেকে নিয়ে এসেছিল ফারহান ও রাজু, ঠিক সেভাবে বন্ধুর জন্য তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে তুলে আনতে দেখেছি। বন্ধুর জন্য নিজে গ্র্যান্টেড হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহায্য করতে দেখেছি। ছলনাময়ীর কাছ থেকে দূরে নিয়ে জীবনকে উপভোগ করতে বাধ্য করতে দেখেছি। নিজে সাক্ষী হয়ে বিয়ে পড়াতেও দেখেছি। এমন বন্ধু ও কাছের মানুষেরা আজীবন সুখে থাকুক। এমন বন্ধু সবার জীবনে আসুক।

চাতুরের মতো চরিত্র বাস্তব জীবনেও দেখেছি। স্যারকে তোষামোদ করে পরবর্তীকালে নিজের জীবনে সিঁড়ির নিচে বিড়ির দোকান দিতে দেখেছি। ফয়সাল, আরিফ, জামিল, হাফিজ, রাহেদুল, সাইদুল, নাঈমুল, নজরুল, আমির, জাহিদ, হাবিব, রাফি, মহি ও সাকিবদের মধ্যে সত্যিকারের ইডিয়টস দেখেছি। নিজের কাজ ফেলে রেখে, শরীরের যত্ন না নিয়ে বন্ধুর জন্য ছুটে চলতে দেখেছি। সাইমা, শ্রেয়া, কানেতা, তায়েবা, হাবিবা, হালিমা, মীম, মারিয়া, তানিয়া, নাদিয়া, দেবী, ঐশী, মিথিলা, নাঈমা, অনামিকা ও নাবিলাদের মধ্যে বোনের মতো বন্ধুত্ব দেখেছি। তাঁদেরও দেখেছি বন্ধুর জন্য নিজেদের স্বার্থ দূরে সরিয়ে কাজ করতে। বিয়ের সময় একই রঙের পোশাক পরে নাচতে ও বিদায় জানাতে। অদ্ভুত সুন্দর বাস্তব জীবনের থ্রি ইডিয়টরা!

শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম