পঞ্চব্রীহি ও বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে নিজের উদ্ভাবিত নতুন চারটি জাতের ধানের ছড়া দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে। বিশিষ্ট জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী একটি নতুন জাতের ধানগাছ উদ্ভাবন করেছেন, যেটি একবার রোপণে পাঁচবার ধান দেবে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে। এই পাঁচ প্রকার ধান হলো বোরো একবার, আউশ দুবার ও আমন দুবার। অর্থাৎ তিন মৌসুমে বা বছরজুড়েই ধান দেবে এই গাছ। তিনি উদ্ভাবিত এই ধানগাছের নাম দিয়েছেন ‘পঞ্চব্রীহি’। পঞ্চ মানে ‘পাঁচ’ আর ব্রীহি মানে ‘ধান’।

ধানগাছের দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণা করেন ড. আবেদ চৌধুরী। তিনি চাইছিলেন আম-কাঁঠালের গাছ যেমন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে, ঠিক তেমনই ধানগাছগুলো দীর্ঘ আয়ু পাক। দিনরাত কাজ করে যান ২০ প্রকারের ভিন্ন জাতের ধানগাছ নিয়ে। প্রথমে নতুন ধানের শিষ হয়, এমন ভিন্ন জাতের ১২টি ধানবীজ সংগ্রহ করেন। তিন বছর ধরে এই ১২ ধরনের ধানের জাতগুলো চাষ করে পর্যবেক্ষণ করেন তিনি; যাতে দেখা যায়, নিয়মিতভাবে দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে এই ধানগুলো। অতঃপর তিনি একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা শুরু করেন এবং তাতেও সফল হন। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে চারটি জাত ছাড়া অন্যগুলো চতুর্থবার ফলনের পর ধ্বংস হয়ে যায়। এই ৪ জাতের ধানের ওপর আবারও ১০ বছর ধরে গবেষণা চালান বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী
বিজ্ঞানচিন্তা ফাইল ছবি

অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের যেসব গবেষকের নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন তালিকায় উঠেছিল, তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীও একজন। তিনি ১৯৮৩ সালে পিএইচডি করেন যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন স্টেট ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজি থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন।

গুগলে সার্চ দিলেই বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর বিভিন্ন গবেষণাপ্রবন্ধ রিসার্চগেটে পাওয়া যায়। বর্তমানে সব ছেড়ে দেশের জন্য ফিরে এসেছেন সিলেটের এই সন্তান। তাঁর নিজ গ্রাম কানিহাটিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন কৃষি খামার। ইউটিউবে বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের ব্যানারে তাঁর একটি এক ঘণ্টার লেকচার আছে। ২০১৯ সালে তিনি সোনালি ধান নামে আরেকটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছিলেন; যেটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ও ওজন কমাতে সহায়তা করে। এই ধান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন হতে স্বীকৃতি পায়।

দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখেছি, তাদের স্টিকি রাইস বা আঠালো চালের দাম ভিয়েতনাম কিংবা থাইল্যান্ডের চালের দামের চেয়ে দু-তিন গুণ বেশি। এই দাম বেশি হওয়ার কারণ তাদের কৃষকেরা যেন ন্যায্যমূল্য পান। আমাদের এই ধান গবেষণার সাফল্যও দেশের শক্তি হোক।

সউল, দক্ষিণ কোরিয়া