সেরা হওয়ার এটাই কি শেষ সুযোগ নেইমারের

ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারটুইটার থেকে

বার্সেলোনায় সুখের সংসার ছেড়ে নেইমার কেন পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন?

প্রশ্নটা পুরোনো। একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা দেন। কেউ বলেন ব্যালন ডি’অর জয়ের আশায়। আবার কেউ বলেন একটি ফুটবল টিম চালাতে চেয়েছিলেন নেইমার; যে টিমের নাম বললে সবার আগে তাঁর নাম চলে আসবে। ওই টিমের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, মাঠের সফলতা এবং ব্যক্তিগতভাবে ব্যালন ডি’অর জয়। তাঁর মধ্যে শঙ্কা ছিল, বার্সায় থাকলে এসব সম্ভব নয়! কারণটা স্পষ্ট। বার্সেলোনা বলতে পুরো বিশ্ব কেবল লিওনেল মেসিকেই চেনে। এমনকি ক্লাবটিতে তিনি নেই প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। তবু সমর্থকেরা এখনো ক্যাম্প ন্যুতে ‘মেসি মেসি’ বলে স্লোগান দেন।

২০১৭ সালে রেকর্ড ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে নেইমারের পিএসজিতে আসাটাকে অনেকেই অপচয় বলেই মনে করে। মনে করাটা স্বাভাবিক। যে লক্ষ্যে তিনি এসেছিলেন, সেটা পূরণ হয়নি। সর্বোচ্চ সফলতা বলতে ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলা। ব্যক্তিগত যে ফোকাস চেয়েছিলেন, সেটাও পূরণ হলো কই! ইনজুরির কারণে প্রতিটি মৌসুমের প্রায় অর্ধেকটা সময় মাঠের বাইরে থাকতে হচ্ছে। এই সুযোগে প্যারিসের প্রধান তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এর মধ্যেই ২০২১ সালে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে আসেন মেসি। এর পর থেকে ব্রাজিলিয়ান নাম্বার টেন যেন দলটির তৃতীয় সেরা তারকা!

পিএসজিতে মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে ‘ত্রয়ী’র দিন ফুরিয়েছে। মেসি এখন ইন্টার মায়ামির
ছবি: রয়টার্স

তবে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে পাড়ি জমিয়েছেন লিওনেল মেসি। এমবাপ্পেও শিগগিরই রিয়াল মাদ্রিদে চলে যেতে পারেন! এ কারণে তাঁকে চলমান জাপান সফরের দলে রাখেনি পিএসজি ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ ক্লাবটিতে এই মুহূর্তে একমাত্র বড় তারকা বলতে আছেন কেবল নেইমার। নিজেকে পুনরায় সেরাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এটাই হতে পারে তাঁর শেষ সুযোগ! এর পক্ষে আরও কিছু কারণ রয়েছে।

সম্পূর্ণ নতুন একটি দল
মেসি, এমবাপ্পে ও সোর্হিও রামোস চলে যাওয়ায় পিএসজিতে এই মুহূর্তে বড় তারকা নেই বললেই চলে। নতুন যে কয়েকজনকে এরই মধ্যে দলভুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা কেউই বড় তারকা নন। তবে সবাই মেধাবী এবং পরিশ্রমী। সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে কয়েক বছরের মধ্যে দারুণ একটি দল গড়ে উঠবে। ম্যানেজমেন্টও আগের মতো আর অঢেল অর্থ খরচ করতে চাইছে না। যা খরচ হবে সব হিসাব করে। উদাহরণ হিসেবে সেন্টারব্যাক মিলান স্ক্রিনিয়ারের কথা বলা যায়। তাঁকে এবার সম্পূর্ণ ফ্রি এজেন্ট হিসেবে দলে ভিড়িয়েছে পিএসজি। উরুগুয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল উগার্তে ও দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার লি কাং-ইনকেও খুবই স্বল্পমূল্যে দলে ভেড়ানো সম্ভব হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে মার্কো আসেনসিওকে টেনেছে তারা।

নেইমার ও লুইস এনরিকে
ছবি: এএফপি

নতুন মৌসুম শুরু হতে এখনো সপ্তাহ দুই বাকি। এই সময়ের মধ্যে আরও কয়েকজন খেলোয়াড়কে দলভুক্ত করা হবে যে তা একরকম নিশ্চিত। বিশেষ করে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ও ফরোয়ার্ড কেনা হতে পারে। সম্প্রতি প্যারিসে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন নতুন কোচ লুইস এনরিকে। বলেছেন, মৌসুম শুরু হওয়ার সময় দলের চেহারা কেমন হতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

পুরোনো কোচকে ফিরে পাওয়া
লুইস এনরিকের সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছেন নেইমার। বার্সেলোনায় দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াও দারুণ ছিল। জয় করেছেন ট্রেবলসহ অসংখ্য শিরোপা। একে অপরের দুর্বলতা ও শক্তির দিকগুলো ভালোই জানা আছে তাঁদের। সবচেয়ে বড় কথা, কাজের চাপ সামলে নেইমারের সেরাটা বের করে আনতে পারেন তিনি। গুঞ্জন রয়েছে, লুইস এনরিকে পিএসজির দায়িত্ব নেওয়াতেই প্যারিসে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। অন্যথায় মেসি ও এমবাপ্পের মতো তাঁকেও হয়তো এই মৌসুমেই হারাত ক্লাবটি।

সেরা হওয়ার এটাই কি শেষ সুযোগ নেইমারের
ছবি: রয়টার্স

চাপমুক্ত হয়ে খেলা
একজন ফুটবলারের কাছ থেকে সেরা পারফরম্যান্স কখন বের হয়ে আসে? যখন সে চাপমুক্ত থাকে। বর্তমানের পিএসজি স্কোয়াডটিতে চাপ নেই বললেই চলে। এত দিন কর্তৃপক্ষ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের একটা চাপ ছিল। যত দূর শোনা যায়, সেটা এখন আর নেই। নতুন করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল সাজাতে চাইছে তারা। যারা কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং দল হিসেবে খেলবে। এ জন্য সময় দরকার।

এর বাইরে মেসি ও এমবাপ্পে না থাকায় মিডিয়ার চাপও থাকবে না। দলের বাকিরা সবাই কঠোর পরিশ্রমী। ফলে সম্পূর্ণ চাপমুক্ত থেকেই খেলতে পারবেন নেইমার। যদিও কাঁধে কিছু দায়িত্ব থাকবে। বিশেষ করে পিএসজি দল হিসেবে কত দূর যাবে, সেটা নির্ভর করবে নেইমার তাদের কত দূর নিয়ে যেতে পারেন। আর এ পরিস্থিতিই এই মুহূর্তে তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য দরকার। আর চাপমুক্ত নেইমার কতটা ভয়ংকর হতে পারেন, তা সান্তোস ও বার্সেলোনায় থাকাকালীন তা প্রমাণও করেছেন।