যেখানে কৃষ্ণচূড়া আর পানকৌড়ি খেলা করে

ঢাকার অদূরে বিরুলিয়ায় বাঁশের মাচাঙের ওপর বসে এভাবেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়ছবি: সাদিক খান

সকাল-বিকেল জ্যাম আর গাড়ির হর্নের শব্দ শুনতে শুনতে ঢাকা যেন এক বিরক্তিকর, কাটখোট্টা নগরী। তবু জীবন–জীবিকার তাগিদে শহর ছেড়ে পালানোর জো নেই। অভ্যাস হয়ে গেছে সবকিছু। ছটফট করতে করতে টিকে থাকতে হয় দিনের পর দিন। একটা পরিচিত গানের লাইন মনের মধ্যে প্রায়ই প্রশ্ন তোলে, ‘কোথায় শান্তি পাব কোথায় গিয়ে? বলো কোথায় গিয়ে?’

পয়লা মে। ছুটির দিন। বাসায় বসে থেকে বিমর্ষ হওয়ার চেয়ে ভাবলাম একটু ঘুরে আসি। বাসা থেকে মিরপুর ১০ মেট্রোস্টেশন ৫ মিনিট পায়ে হাঁটার দূরত্বে। কথা হলো ছবিয়াল সাদিক ভাইয়ের সঙ্গে। নিমন্ত্রণ জানালেন উত্তরা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত দ্রুতগামী মেট্রোতে চড়ে চলে গেলাম সেখানে। উত্তরা কেন্দ্র থেকে রিকশায় করে পঞ্চবটি। সেখান থেকে বাসে বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে কিছুটা সামনে গিয়ে নামলাম একটা জায়গায়। মাটির রাস্তা ধরে ভেতরের দিকে মিনিট তিনেক হাঁটার পর দেখা মিলল চোখজুড়ানো একটা ছোট্ট লাল দ্বীপের। কৃষ্ণচূড়া দ্বীপ। এটার আসল নাম কী, আমার জানা নেই।

ঝিল আকৃতির বড় জলাশয়ের মধ্যে জেগে আছে কিছু গাছ। চারপাশে পানি। গাছে লাল, হলুদ ফুলের ছড়াছড়ি। নিজের রূপ মেলে ধরার প্রতিযোগিতায় যে যার মতো। পানির মধ্যে প্রতিচ্ছবি ভেসে দোল খাচ্ছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। বাঁশের মাচাঙের ওপর আমরা বসলাম পা দুলিয়ে। পাশাপাশি অনেকগুলো মাচাং। সবগুলো বাঁশের। যাঁরা থাকেন তাঁরা সেখানেই রান্নাবান্না করেন, খামারের দেখাশোনা করেন। এ যেন ঢাকার এক ভিন্ন রূপ। কোলাহলমুক্ত, নীরব, শান্ত ঢাকা। দূরের দ্বীপ থেকে কানে ভেসে আসছিল পাখির কলরব। অদূরে ছবির মতো দাঁড়িয়ে ছিল দানবাকৃতির বিল্ডিং। হয়তো অপেক্ষায় আছে গ্রাস করার।

মিনিট ত্রিশেক পর রোদমাখানো দিন আস্তে আস্তে মেঘলা হয়ে এলো। দূরের কৃষ্ণচূড়া যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠল। পানির মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ কোথা থেকে মাথা ভাসিয়ে ম্যাজিকের মতো গায়েব হয়ে যায় কয়েকটা পানকৌড়ি। সবুজ জলের মধ্যে হয়তো লুকোচুরি খেলছে মাছেদের সঙ্গে। অন্যদিকে জলাশয়ের মাঝখানের ঘেরের ওপর বসে ঝিমিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছিল আরও শত শত। আজ তাদের হয়তো জলে নামা বারণ। এরই মধ্যে হুড়মুড় করে নামল বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে দ্বীপের কৃষ্ণচূড়া আরও সতেজ হয়ে উঠতে লাগল। এক পায়ে দাঁড়ানো বক অপেক্ষা করতে থাকল পুঁটির।

‘মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিগ্‌–দিগন্তের পানে’ গাইতে গাইতে এক পশলা বৃষ্টির আগমুহূর্তে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে শামুকভাঙা পাখি। দূরের দ্বীপের গাছগুলো যেন নড়ে উঠল একটিবারের মতো। গাছভর্তি তখন পাখি। সেই নৈসর্গিক দৃশ্যের বর্ণনা করা কঠিন। শুধু জানি, এখানে কোনো মন খারাপ নেই। আজ কৃষ্ণচূড়া, পানকৌড়ির দিন।

মিরপুর ১০, ঢাকা