আমাদের মায়েরা
ফিরে তাকান শুধু মা
গত রোববার ছিল মা দিবস। দিনটি উপলক্ষে মায়ের সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি ও ভালো লাগার ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য লেখা পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা। বাছাইকৃত লেখা নিয়ে আজকের আয়োজন।
গ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার সময় মা নিয়ম করে পথের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। ওনার চোখ পানিতে টলমল করে। মুখে আঁচল চেপে মা হাত নাড়িয়ে বিদায় জানান। তিনি যেখানে দাঁড়ান, সেখান থেকে বেশ দীর্ঘ সময় আমাকে দেখা যায়। যখনই চোখের আড়াল হই, মুঠোফোনটা বেজে ওঠে। বাবা, বাসে ঠিকমতো উঠে ফোন দিস, কেমন? আমি বলি, আচ্ছা মা।
বাসে উঠে মাকে জানানোর কথা আর মনে থাকে না। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মুঠোফোনটা দ্বিতীয়বার বেজে ওঠে। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে মা বলেন, বাবা, বাসে উঠেছিস ঠিকমতো? কত দূর গেলি! আমি বলি, এই তো শাহজাদপুর। মা ফোন রেখে দেন। পথে যেতে যেতে নানা কাজ। পাশে বসা সহযাত্রীর সঙ্গে কত রকম মিষ্টি আলাপ! শুধু ভুলে যাই মায়ের কথা। মুঠোফোনটা আবার বেজে ওঠে। তৃতীয়বার মায়ের ফোন। বাবা কত দূর পৌঁছেছিস? আমি বলি, মা, বিরক্ত করো না তো। ঘুমাচ্ছি, পৌঁছে জানাব। ফোনটা কেটে দিই। মা কী যেন বলতে চেয়েও পারলেন না।
ব্যাগটা খুলে দেখি, মায়ের দেওয়া খাবার। সাজানো গোছানো অনেকগুলো বক্স।
বাসায় পৌঁছে ভুলেই যাই মাকে জানানোর কথা। মা হয়তো ফোন দিতে আর সাহস করে ওঠেননি। ভাবেন ব্যস্ত। ক্ষুধা লাগলে শরীর কাঁপতে থাকে। রান্নাঘরে গিয়ে খাবারের খোঁজ করি। কিছুই নেই। বাসার অন্যরা খেয়ে নিয়েছে। বিকেলের বাসে রওনা হওয়ায় এখন গভীর রাত। ভোর হতে অনেক দেরি। ব্যাগটা খুলে দেখি, মায়ের দেওয়া খাবার। সাজানো গোছানো অনেকগুলো বক্স। আমার পছন্দের গরুর কালাভুনা, শর্ষে ইলিশ, শিং মাছের ঝোল আর চিকন চালের পায়েস। অনুভব করলাম, আমার চোখ ভেজা।
মায়ের কথা মনে পড়ল। বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মাকে কল দিলাম। ফোন ধরেই তিনি বললেন, বাবা, পৌঁছেছিস ভালোভাবে? চোখের পানি আটকে রাখতে ব্যর্থ হই। বললাম, পৌঁছেছি মা। শহরের আকাশে প্রচণ্ড মেঘ। বৃষ্টি হবে হয়তো। ফোন রাখছি। ভালো থেকো। ওপাশ থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে, ভালো থাকিস, বাবা।
বাড়ি থেকে চলে আসার সময় মায়ের ভেজা চোখের দৃশ্যটা ভেসে ওঠে।
বসুন্ধরা, ঢাকা